কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা

কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা-

কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির এই সময়ে কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা যে কতখানি, তা অল্প কথায় লিখে শেষ করা যাবে না। আধুনিক বিশ্বের উন্নয়ন কম্পিউটার ছাড়া চিন্তাই করা যায় না। দিন দিন এই যন্ত্রটির ব্যবহার এতো বেশী বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেন এই যন্ত্রটি ছাড়া বিশ্ব আজ অচল। আমাদের জীবনে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব কতখানি, কম্পিউটার আমাদের কি কি কাজে লাগে বা কম্পিউটার আমাদের জীবন চলার পথ কতটা সহজ করে দিয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আসুন জেনে নেই।

কম্পিউটার কি?

Computer শব্দটির অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। এই শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রীক শব্দ ‘Compute’ থেকে। তবে কম্পিউটার কিন্তু এখন শুধুমাত্র গণনাকারী যন্ত্র হিসেবেই সীমাবদ্ধ নেই। কারণ কম্পিউটার বর্তমানে গণনার কাজ ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ খুবই অল্প সময়ে করে থাকে। যা মানুষের পক্ষে এতো অল্প সময়ে করা সম্ভব নয়। যদিও প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে মানুষই কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবুও কম্পিউটার আমাদের জীবন চলার পথ অনেক সহজ করে দিয়েছে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব কতটুকু-

বর্তমান সময়ে খুঁজতে গেলে খুব কম সংখ্যক ক্ষেত্রই খুঁজে পাওয়া যাবে যেখানে কম্পিউটারের ব্যবহার হয় না। সারা বিশ্বে কাজ করার যত ধরণের ক্ষেত্র আছে তার বেশীরভাগই কম্পিউটার ব্যবহার করে সম্পন্ন করতে হয়। এমন অনেক কাজ আছে যে কাজগুলো কম্পিউটারের সাহায্য ছাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। আবার কিছু কাজ আছে যেগুলো কম্পিউটারের সাহায্য ছাড়াও সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে অনেক সময় এবং জনবলের প্রয়োজন হয়। এ সকল বিষয় পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় কম্পিউটার ছাড়া বিশ্ব আজ অসহায়। কম্পিউটার ব্যবহার করতে অবশ্যই কম্পিউটার পরিচালনার জ্ঞান থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।  

কম্পিউটার ব্যবহার করে কি কি কাজ করা যায়-

০১) অফিসিয়াল ডকুমেন্টস্, রিপোর্ট তৈরী করা
০২) ডাটা এন্ট্রি করা
০৩) পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরী করা
০৪) মাইক্রোসফট এক্সেলে হিসাব সংক্রান্ত কাজ করা
০৫) গ্রাফিক্স ডিজাইন
০৬) ওয়েব ডিজাইন
০৭) ভিডিও এডিটিং
০৮) ফটো এডিটিং
০৯) আউটসোর্সিং
১০) শিক্ষা সেবা
১১) চিকিৎসা সেবা
১২) ভ্রমন সেবা
১৩) তথ্য সংগ্রহ
১৪) অনলাইন সংবাদ
১৫) ব্যাংক পরিচালনা
১৬) বই প্রকাশনা
১৭) গবেষণা

কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে কতিপয় কিছু কাজের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা-

ডাটা এন্ট্রি করার জন্য কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব-

বিভিন্ন অফিসে বা বিভিন্ন প্রজেক্টের অনেক ধরণের ডাটা থাকে। যেগুলো কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ করতে হয়। যেমন বিভিন্ন ধরণের ক্লাব/সমিতি বা এই ধরণের অনেক সংস্থা আছে যেখানে অনেক সদস্য থাকে, সেই সদস্যদের কিছু ডাটা ক্লাব/সমিতি বা এই ধরণের প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। আবার আমাদের দেশে যে আদম শুমারী হয় তাদের ডাটা অথবা ভোটার লিষ্ট ইত্যাদি কম্পিউটারে এন্ট্রি দিতে হয়। এই এন্ট্রিগুলোকেই বলা হয় ডাটা এন্ট্রি।

এই ডাটা এন্ট্রিগুলো কম্পিউটারেই কেন দেওয়া হয়?

কারণ হাতে-কলমে এই এন্ট্রিগুলো করতে গেলে অনেক ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া অনেকের হাতের লেখা বুঝা যাবে না। আর কম্পিউটারে এন্ট্রি দেওয়ার সময় ভুল হলে আবার সংশোধন করা যায়। সুতরাং ডাটা এন্ট্রি করার জন্য কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী-তে অফিসার ক্যাডেট পদে জনবল নিয়োগ

কোন প্রকল্পের প্রেজেন্টেশন তৈরী ও উপস্থাপন করা-

নতুন কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার পূর্বে, সেই প্রকল্পের মূল পরিকল্পনা/ভিউ/পদক্ষেপ বা প্রকল্পের অগ্রগতি ইত্যাদি বিষয় প্রয়োজনীয় ব্যক্তি বা ক্লায়েন্ট এর নিকট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হয়। যা মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে খুব সহজেই উপস্থাপন করা যায়। এই প্রেজেন্টেশন তৈরী করার ক্ষেত্রেও কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক।

মাইক্রোসফট এক্সেল বা হিসাব সংক্রান্ত কাজ করতে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব-

মাইক্রোসফট এক্সেল এমন একটি প্রোগ্রাম বা এর ব্যাপকতা এতো বেশী, যার সাহায্যে হিসাব-নিকাশ সংক্রান্ত অনেক জটিল কাজ খুব সহজেই সমাধান করা যায়। যেমন- বেতন শীট, এটেন্ডেন্ট শীট তৈরী; একাউন্টস্, এডমিন এবং এইচআর সেকশন পরিচালনা সহ বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করতে মাইক্রোসফট এক্সেল এর গুরুত্ব অপরিসীম। উক্ত কাজগুলো যদি হাতে-কলমে করা হতো, তবে অনেক ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো এবং সেই সাথে অনেক সময়ও লেগে যেতো। মাইক্রোসফট এক্সেল প্রোগ্রামে অনেক মজার মজার ফাংশন রয়েছে যেগুলোর সাহায্য নিয়ে আপনি (কোন কোন ক্ষেত্রে) পুরো এক মাসের কাজ একদিনে শেষ করতে সক্ষম হবেন। একমাত্র তারাই এই কথাটি বিশ্বাস করবেন, যারা মাইক্রোসফট এক্সেল প্রোগ্রামের কাজে পারদর্শী।

গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করতে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব

ডিজাইন নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই মহান আল্লহ রাব্বুল আলামীন এর প্রশংসা করতে হবে (আল্হামদুলিল্লাহ্)। কারণ তিনি নিজেই একজন নিপুন/নিখুঁত ডিজাইনার। তাঁর সৃষ্টিকূলের শ্রেষ্ঠ হচ্ছে মানুষ। আমাদের দেহের গঠন প্রণালী বা চেহারার দিকে যদি লক্ষ্য করি, তবে বুঝা যায় কতই না সুন্দর ডিজাইন করে মহান আল্লহ তা’আলা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তাছাড়া প্রকৃতির প্রত্যেকটি ডিজাইন এতটাই সুন্দর, যার জন্য মহান রবের প্রশংসা করে শেষ করা যাবে না। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও ডিজাইন শব্দটি ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ডিজাইনের ব্যবহার নেই এমন জিনিষ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। তবে এ সকল ডিজাইন বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে তৈরী করা যায়। যেমন-

০১) গ্রাফিক্স ডিজাইন
০২) আর্কিটেকচারাল ডিজাইন
০৩) ওয়েব ডিজাইন ইত্যাদি

গ্রাফিক্স ডিজাইন এগুলির মধ্যে অন্যতম। ডিজাইনের জগতে গ্রাফিক্স ডিজাইন অনেক বড় একটি সেক্টর। এর পরিধি ব্যাপক। আসলে গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমেই বেশিরভাগ ডিজাইন করা হয়। গ্রাফিক্স ডিজাইন করার কিছু মাধ্যম হলো-

০১) এডোবি ফটোশপ
০২) এডোবি ইলাস্ট্রাটর
০৩) এডোবি ইনডিজাইন ইত্যাদি

গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে কি কি কাজ করা যায়-

০১) ভিজিটিং কার্ড
০২) ক্যাশ মেমো ডিজাইন
০৩) প্যাড/লেটার হেড ডিজাইন
০৪) ফ্লাইয়ার ডিজাইন
০৫) ব্রশিউর ডিজাইন
০৬) লিফলেট ডিজাইন
০৭) বিলবোর্ড ডিজাইন
০৮) ব্যানার ডিজাইন
০৯) বিভিন্ন ধরণের পোস্টার ডিজাইন
১০) লোগো ডিজাইন
১১) প্যাকেজিং ডিজাইন
১২) ফ্যাশন ডিজাইন
১৩) বুটিক্
১৪) ক্যালেন্ডার ডিজাইন
১৫) বুক
১৬) বুক কভার ডিজাইন
১৭) গার্মেন্টস্ এক্সেসরিজ ডিজাইন ইত্যাদি

আমি কি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারব?

অবশ্যই শিখতে পারবেন। বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখার জন্য ইউটিউবে বাংলায় অনেক টিউটরিয়াল রয়েছে। ইউটিউব থেকে সহজেই গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারবেন।

বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি-২০২২

ওয়েব ডিজাইন-

এটি হচ্ছে অনলাইন ডিজাইনের অন্যতম একটি ক্ষেত্র। বর্তমানে দেশে-বিদেশের স্ট্যান্ডার্ড মানের প্রত্যেকটি কোম্পানীর একটি করে ওয়েবসাইট আছে। যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোম্পানীগুলো তাদের কোম্পানীর বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ বা প্রচারণা করে থাকে। খুব সহজেই কোম্পানীগুলো তাদের কোম্পানীর মার্কেটিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন তথ্য আন্তর্জাতিকভাবে টার্গেটেড অডিয়েন্সের নিকট পৌঁছিয়ে থাকে। ওয়েবসাইট সংক্রান্ত এ সকল কাজ পরিচালনার জন্য কম্পিউটারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

ভিডিও এডিটিং-

ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমেও প্রচুর পরিমানে ইনকাম করা সম্ভব। এর মাধ্যমেও আপনি দুইভাবে ইনকাম করতে পারবেন।

০১) লোকাল
০২) অনলাইন

নাটক, সিনেমা, টিভি সংবাদ, ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদি সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যে সকল ভিডিও প্রকাশ করা হয় সেই ভিডিওগুলোতে প্রচুর এডিটিং করতে হয়। বিশেষ করে বর্তমানে ইউটিউব, ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে প্রচুর পরিমানে ইনকাম করা যায়। ভিডিওটি ইউনিক করার জন্য অনেক কিছু এডিটিং করতে হয়। ভিডিও এডিটিং এর কাজ শিখে লোকাল এবং অনলাইন থেকে সহজেই ইনকাম করতে পারবেন। এক্ষেত্রেও কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

ফটো এডিটিং করতে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা-

শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে চাকুরী জীবন সহ জাতীয়/আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কাজের জন্য ছবির ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এই ছবি প্রিন্ট করার পূর্বে অনেক এডিটিং করতে হয়। এছাড়াও গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, বিভিন্ন পোষ্টার, ব্যানার, ম্যাগাজিন, ব্রশিউর ইত্যাদিতে ছবির ব্যবহার করা জরুরী। এই ছবিগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ফটো এডিটিং বাধ্যতামূলক।

ফটো এডিটিং শিখে লোকাল এবং অনলাইনে প্রচুর পরিমানে ইনকামের সুযোগ রয়েছে। এ কাজগুলি করার জন্যও কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশী।

শিক্ষার মান উন্নত করার লক্ষ্যে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব

শিক্ষার মান উন্নত করার লক্ষ্যে কম্পিউটারের অনেক ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজ কম্পিউটার ব্যবহার করে শিক্ষা বিষয়ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অনলাইন থেকে খুব সহজেই সংগ্রহ করছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (অনলাইন) ভর্তি, এবং শিক্ষা বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার সময়সূচী/রুটিন, পরীক্ষার রেজাল্ট, পাসের হার সহ আরও অনেক তথ্য সংগ্রহ করছে। কম্পিউটার এর মাধ্যমে এ কাজগুলো খুব সহজেই করা যাচ্ছে।

চিকিৎসা-

উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক অত্যাধুনিক মেশিনের ব্যবহার করা হয়। যার বেশিরভাগই কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও কম্পিউটারের ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও ষ্ট্যান্ডার্ড মানের ক্লিনিক বা হাসপাতালগুলোতে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য লিপিবদ্ধ, হাসপাতালের বিল, ডাক্তারের ফিস ইত্যাদি কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইনে এন্ট্রি করা হয়। তথ্যগুলো কম্পিউটারে এন্ট্রি করার পর প্রিন্ট করে প্রত্যেক রোগীকে দেওয়া হয়। যে প্রিন্টিং কপি হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় দেখিয়ে রোগীকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। চিকিৎসা সংক্রান্ত এ সকল কাজে কম্পিউটার অনেক সহায়ক।

আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা-

আউটসোর্সিং কে অনেকে অনেকভাবে সংজ্ঞায়িত করে থাকে। আমার ভাষায় এর সহজ অর্থ হলো- স্বাধীনভাবে ইনকাম করা।

পরিভাষায় বলা যায়- কারো অধীনে না থেকে বিভিন্ন সোর্স থেকে কাজ সংগ্রহ করে স্বাধীনভাবে সার্ভিস দেওয়ার মাধ্যমে ইনকাম করাকে আউটসোর্সিং বলা হয়। আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্র আবার দুইটি। যথা-

০১) লোকাল/অফলাইন আউটসোর্সিং
০২) অনলাইন আউটসোর্সিং

লোকাল/অফলাইন আউটসোর্সিং-

আমাদের দেশের বিভিন্ন কোম্পানীতে অনেক সময় দেখা যায়, তাদের কোম্পানীর এমন কিছু কাজ করানোর প্রয়োজন হয়, যে কাজগুলি করার জন্য কোম্পানীতে নির্ধারিত কোন সেকশন বা জনবল নিয়োগ করা থাকে না। কারণ এই কাজগুলির প্রয়োজনীয়তা হঠাৎ করে দেখা দেয়। এই কাজগুলি করানোর জন্য যদি কোন আলাদা সেকশন তৈরী বা জনবল নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে কোম্পানীর খরচ অনেক বেড়ে যায়। যে কারণে উক্ত কাজগুলি চুক্তি ভিত্তিক বাইরের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানো হয়। এতে করে যে কোম্পানী কাজ করায় এবং যে ব্যক্তি বা কোম্পানী কাজ করে উভয়ই লাভবান হয়। এই পদ্ধিতিকেই লোকাল/অফলাইন আউটসোর্সিং বলা হয়।

অনলাইন আউটসোর্সিং-

অনলাইন আউটসোর্সিং কে সহজ অর্থে এভাবে বলা যায়- নিজের কর্মস্থলে বসে অনলাইনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি বা কোম্পানীর চাহিদা মোতাবেক কিছু কাজ করার মাধ্যমে ইনকাম করাকে অনলাইন আউটসোর্সিং বলে। এটা বিশাল একটি জগৎ। এর পরিধি বা ক্ষেত্র ব্যাপক। অনলাইন আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে (কল্পনার অধিক) ইনকাম করা সম্ভব।

আমাদের দেশে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করেও অনেকে বেকার। আবার অনেকে চাকুরী করলেও যোগ্যতা বা চাহিদানুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না।

বর্তমানে মানুষ আউটসোর্সিং এর দিকে বেশী অগ্রসর হচ্ছে। আমরা অনেকেই জানি অনলাইন থেকে অধিক পরিমানে ইনকাম করা সম্ভব। যে পরিমান ইনকাম একটি ভালো চাকরী করেও করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে- মানুষ অনলাইন ইনকামের প্রতি যতটা অগ্রসর হবে, ততটাই বেকারত্বের হার কমে যাবে। তাছাড়া যারা কর্মে নিয়োজিত আছেন তারাও তাদের কাজের পাশাপাশি যদি অনলাইন ইনকামের প্রতি আগ্রহী হন এবং সে অনুযায়ী প্রচেষ্টা করেন, তবে তাদের জীবন-যাত্রার মান আরও উন্নত হয়ে যাবে। একটি জাতিকে উন্নতি করতে হলে পরিশ্রমী হতে হবে। কারণ যে জাতি যত পরিশ্রমী সে জাতি ততটাই উন্নত। সফলতা পেতে হলে কাজের বিকল্প কিছুই নেই। আর বর্তমানে কাজের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হলো অনলাইন আউটসোর্সিং।

আউটসোর্সিং করতে হলে কিছু স্কিলপূর্ণ কাজ শিখতে হবে। যার মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে ইনকাম করার সম্ভাবনা রয়েছে। কাজ শিখা এবং সে অনুযায়ী কাজ করার জন্য কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশী। এ ধরণের কাজগুলো করার জন্য অবশ্যই আপনার কম্পিউটার থাকতে হবে এবং কম্পিউটার পরিচালনায় পারদর্শী হতে হবে।

ভ্রমন-

দেশের দূরবর্তী যে কোন স্থানে ভ্রমনের জন্য বেশীরভাগই অনলাইন সেবা চালু হয়েছে। যেমন- বিমান, ট্রেন এবং হাইওয়েতে চলাচলকারী বেশীরভাগ বাস কর্তৃপক্ষই অনলাইনে টিকেট ব্যবস্থা চালু করেছে। এছাড়া বিদেশে ভ্রমণ করতে গেলে তো অবশ্যই অনলাইন ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। যেমন- পাসপোর্ট, ভিসা, বিমানের টিকেট ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনলাইন সেবা গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এ সকল সেবা গ্রহণের জন্য অবশ্যই কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কম্পিউটার ছাড়া এগুলো কল্পনাও করা যায় না।

তথ্য সংগ্রহ-

কিছুদিন পূর্বেও আমাদের যে কোন বিষয়ে তথ্যের প্রয়োজন হলে, আমরা আমাদের আশে-পাশের জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাহায্য গ্রহণ করতাম। সেক্ষেত্রে অনেক সময় লেগে যেতো এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যেতো না। কিন্তু বর্তমানে যে কোন তথ্য সংগ্রহ করার জন্য আমরা গুগল, ইউটিউব, উইকিপিডিয়া সহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজে দেখি। খুব সহজেই আমরা আমাদের কাঙ্খিত তথ্য খুঁজে বের করি। শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ করাই নয়; বরং আপনার যে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা আর্টিকেল প্রচারও করতে পারবেন। তথ্যবহুল বিভিন্ন আর্টিকেল লিখে অনলাইনে প্রচারের মাধ্যমেও প্রচুর পরিমানে ইনকাম করা সম্ভব। এ সকল তথ্য সংগ্রহ বা প্রচারণার কাজ আমরা কম্পিউটারের মাধ্যমে খুব সহজেই করতে পারি। বর্তমানে স্মার্টফোন দিয়েও এ সকল কাজ করা সম্ভব। তবে কম্পিউটারের মাধ্যমে যতটা সহজে করা যায় স্মার্টফোনের মাধ্যমে এতোটা সহজে করা যায় না।

অনলাইন সংবাদ-

অনলাইনে সংবাদ প্রচারণার ক্ষেত্রে কম্পিউটার এর বিকল্প কিছুই চিন্তা করা যায় না। সংবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তথ্যগুলো কম্পিউটারে কম্পোজ, ছবি এডিটিং, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি করার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমের ওয়েবসাইট বা চ্যানেলে আপলোড করে প্রচার করতে হয়। অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ এবং বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদের মাধ্যমে খুব সহজেই আমরা বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন খবর জানতে পারি। কম্পিউটার এর সাহায্য নিয়ে আমরা এ কাজগুলো খুব সহজেই করতে পারি।

ব্যাংক পরিচালনায় কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা-

বহু আগে থেকেই মানুষের অর্থ-সম্পদের নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংকিং সেবা চালু হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকিং সেবার প্রভাব এতো বেশি বিস্তার লাভ করেছে যে, বেশিরভাগ আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেই এ সকল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে হচ্ছে। সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে তো লেনদেন হচ্ছেই, এছাড়াও কিছু কিছু ব্যাংক লেনদেনকে আরও সহজতর করার জন্য কিছু পদ্ধতি চালু করেছে। যেমন-

০১) বিকাশ
০২) নগদ
০৩) রকেট ইত্যাদি

এগুলোর মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নির্দিধায় লেনদেন করছে। ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের জন্য প্রত্যেক গ্রাহককে ব্যাংকে একটি একাউন্ট খুলতে হয়। পরবর্তীতে গ্রাহক তাদের সুবিধামত উক্ত একাউন্টে অর্থ জমা দেওয়া বা একাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করা অথবা অন্য একাউন্টে ব্যালেন্স ট্রান্সফার করতে পারবেন। এ সকল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অবশ্যই কম্পিটারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কম্পিউটার ছাড়া ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব-

পৃথিবীতে যে কত লক্ষ কোটি বই রয়েছে তার সঠিক কোন হিসাব নেই। বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ভাষায় অসংখ্য বই পৃথিবীতে রচিত হয়েছে। সকল বই প্রথমে কম্পিউটারে কম্পোজ করা হয়, তারপর কিছু ডিজাইনের কাজ করার পর, কোন প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করা হয়। কম্পিউটারের সাহায্য ছাড়া বই পাবলিশ করলে যে সমস্যাগুলো হতো তা নিম্নরূপ-

০১) যদি হাতে লিখে বই পাবলিশ করা হতো তবে অনেক সময় লেগে যেতো
০২) ভুল-ত্রুটিতে ভরা থাকতো
০৩) অনেক লিখা বুঝাও যেতো না
০৪) লিখা ভুল হলে আমরা কাটাকাটি বা ঘসা-মাজা করে থাকি। যা দেখতে খুবই খারাপ দেখায়।
০৫) ইউজার ফ্রেন্ডলী হতো না।
০৬) বই দেখতে সুন্দর হতো না ইত্যাদি

বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন এ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজে বই পড়া যায়।

বিভিন্ন ধরণের বই অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে বা সরাসরি অনলাইনে পড়া যায়। এর কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। যথা-

(ক) বই ক্রয় করার খরচ বেঁচে যায়

(খ) বই বহন করার ঝামেলা থাকে না

(গ) বই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই

গবেষণার কাজে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব-

গবেষকরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে থাকেন। গবেষণা করার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন জিনিষ আবিস্কার করে থাকেন।

এই গবেষণামুলক কাজের জন্য অনেক তথ্যের প্রয়োজন হয়। যে তথ্যগুলো বর্তমানে একজন গবেষক অনলাইন থেকে খুব সহজেই সংগ্রহ করতে পারেন। এ সকল তথ্য সংগ্রহ করার জন্য কম্পিউটারের গুরুত্ব অনেক বেশী।

উপসংহার-

কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে গেলে একটি বই লিখেও শেষ করা যাবে না। সংক্ষেপে কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলার চেষ্টা করেছি।

এর বাইরেও আরও কত কাজে যে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় তা সংক্ষেপে বলে শেষ করা যাবে না। কম্পিউটার ছাড়া বিশ্ব যেন আজ অসহায়। অনেক জটিল কাজ খুবই সহজভাবে অল্প সময়ের মধ্যে কম্পিউটার এর মাধ্যমে আমরা করে থাকি। কম্পিউটার আমাদের জীবন-যাত্রার মান কতটা সহজ করে দিয়েছে এ আলোচনা থেকে তা সহজেই বুঝা যায়। বর্তমানে উন্নয়নমূলক যে কোন কাজ কম্পিউটার এর ব্যবহার ছাড়া কল্পনাও করা যায় না।

বর্তমান পরিবেশ এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করলে সহজেই বুঝা যায় কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশে কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা উচিৎ। কম্পিউটার শিক্ষা একটি জাতিকে স্বাবলম্বী করে তোলার পাশাপাশি উন্নত জীবন যাপনে অগ্রসর হওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দিন যত যাচ্ছে ততই কম্পিউটার এর ব্যবহার বাড়ছে। আস্তে আস্তে বাড়তেই থাকবে। এজন্য কম্পিউটার পরিচালনার ক্ষেত্রে কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি।

কম্পিউটার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে ক্লিক করুন

One thought on “কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *