আউটসোর্সিং-
আউটসোর্সিং কে অনেকে অনেকভাবে সংজ্ঞায়িত করে থাকে। আমার ভাষায় এর সহজ অর্থ হলো- স্বাধীনভাবে ইনকাম করা। পরিভাষায় বলা যায়- কারো অধীনে না থেকে বিভিন্ন সোর্স থেকে কাজ সংগ্রহ করে স্বাধীনভাবে সার্ভিস দেওয়ার মাধ্যমে ইনকাম করাকে আউটসোর্সিং বলা হয়। আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্র আবার দুইটি। যথা-
• লোকাল/অফলাইন আউটসোর্সিং
• অনলাইন আউটসোর্সিং
লোকাল/অফলাইন আউটসোর্সিং-
আমাদের দেশের বিভিন্ন কোম্পানীতে অনেক সময় দেখা যায়, তাদের কোম্পানীর এমন কিছু কাজ করানোর প্রয়োজন হয়, যে কাজগুলি করার জন্য কোম্পানীতে নির্ধারিত কোন সেকশন বা জনবল নিয়োগ করা থাকে না। কারণ এই কাজগুলির প্রয়োজনীয়তা হঠাৎ করে দেখা দেয়। এই কাজগুলি করানোর জন্য যদি কোন আলাদা সেকশন তৈরী বা জনবল নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে কোম্পানীর খরচ অনেক বেড়ে যায়। যে কারণে উক্ত কাজগুলি চুক্তি ভিত্তিক বাইরের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানো হয়। এতে করে যে কোম্পানী কাজ করায় এবং যে ব্যক্তি বা কোম্পানী কাজ করে উভয়ই লাভবান হয়। এই পদ্ধিতিকেই লোকাল/অফলাইন আউটসোর্সিং বলা হয়।
অনলাইন আউটসোর্সিং-
অনলাইন আউটসোর্সিং কে সহজ অর্থে এভাবে বলা যায়- নিজের কর্মস্থলে বসে অনলাইনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি বা কোম্পানীর চাহিদা মোতাবেক কিছু কাজ করার মাধ্যমে ইনকাম করাকে অনলাইন আউটসোর্সিং বলে। এটা বিশাল একটি জগৎ। এর পরিধি বা ক্ষেত্র ব্যাপক। অনলাইন আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে (কল্পনার অধিক) ইনকাম করা সম্ভব। আমাদের দেশে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করেও অনেকে বেকার। আবার অনেকে চাকুরী করলেও যোগ্যতা বা চাহিদানুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না।
বর্তমানে মানুষ আউটসোর্সিং এর দিকে বেশী অগ্রসর হচ্ছে। আমরা অনেকেই জানি অনলাইন থেকে অধিক পরিমানে ইনকাম করা সম্ভব। যে পরিমান ইনকাম একটি ভালো চাকরী করেও করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে- মানুষ অনলাইন ইনকামের প্রতি যতটা অগ্রসর হবে, ততটাই বেকারত্বের হার কমে যাবে। তাছাড়া যারা কর্মে নিয়োজিত আছেন তারাও তাদের কাজের পাশাপাশি যদি অনলাইন ইনকামের প্রতি আগ্রহী হন এবং সে অনুযায়ী প্রচেষ্টা করেন, তবে তাদের জীবন-যাত্রার মান আরও উন্নত হয়ে যাবে। একটি জাতিকে উন্নতি করতে হলে পরিশ্রমী হতে হবে। কারণ যে জাতি যত পরিশ্রমী সে জাতি ততটাই উন্নত। সফলতা পেতে হলে কাজের বিকল্প কিছুই নেই। আর বর্তমানে কাজের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হলো অনলাইন আউটসোর্সিং।
আউটসোর্সিং করতে হলে কিছু স্কিলপূর্ণ কাজ শিখতে হবে। যার মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে ইনকাম করার সম্ভাবনা রয়েছে। কাজ শিখা এবং সে অনুযায়ী কাজ করার জন্য কম্পিউটারের বিকল্প কিছুই নেই। এ ধরণের কাজগুলো করার জন্য অবশ্যই আপনার কম্পিউটার থাকতে হবে এবং কম্পিউটার পরিচালনায় পারদর্শী হতে হবে।
ভ্রমন-
দেশের দূরবর্তী যে কোন স্থানে ভ্রমনের জন্য বেশীরভাগই অনলাইন সেবা চালু হয়েছে। যেমন- বিমান, ট্রেন এবং হাইওয়েতে চলাচলকারী বেশীরভাগ বাস কর্তৃপক্ষই অনলাইনে টিকেট ব্যবস্থা চালু করেছে। এছাড়া বিদেশে ভ্রমণ করতে গেলে তো অবশ্যই অনলাইন ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। যেমন- পাসপোর্ট, ভিসা, বিমানের টিকেট ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনলাইন সেবা গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এ সকল সেবা গ্রহণের জন্য অবশ্যই কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কম্পিউটার ছাড়া এগুলো কল্পনাও করা যায় না।
তথ্য সংগ্রহ-
কিছুদিন পূর্বেও আমাদের যে কোন বিষয়ে তথ্যের প্রয়োজন হলে, আমরা আমাদের আশে-পাশের জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাহায্য গ্রহণ করতাম। সেক্ষেত্রে অনেক সময় লেগে যেতো এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যেতো না। কিন্তু বর্তমানে যে কোন তথ্য সংগ্রহ করার জন্য আমরা গুগল, ইউটিউব, উইকিপিডিয়া সহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজে দেখি। খুব সহজেই আমরা আমাদের কাঙ্খিত তথ্য খুঁজে বের করি। শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ করাই নয়; বরং আপনার যে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা আর্টিকেল প্রচারও করতে পারবেন। তথ্যবহুল বিভিন্ন আর্টিকেল লিখে অনলাইনে প্রচারের মাধ্যমেও প্রচুর পরিমানে ইনকাম করা সম্ভব। এ সকল তথ্য সংগ্রহ বা প্রচারণার কাজ আমরা কম্পিউটার এর মাধ্যমে করতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বর্তমানে স্মার্টফোন দিয়েও এ সকল কাজ করা সম্ভব। তবে কম্পিউটারের মাধ্যমে যতটা সহজে করা যায় স্মার্টফোনের মাধ্যমে এতোটা সহজে করা যায় না।
অনলাইন সংবাদ-
অনলাইনে সংবাদ প্রচারণার ক্ষেত্রে কম্পিউটার এর বিকল্প কিছুই চিন্তা করা যায় না। সংবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তথ্যগুলো কম্পিউটারে কম্পোজ, ছবি এডিটিং, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি করার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমের ওয়েবসাইট বা চ্যানেলে আপলোড করে প্রচার করতে হয়। অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ এবং বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদের মাধ্যমে খুব সহজেই আমরা বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন খবর জানতে পারি। কম্পিউটার এর সাহায্য নিয়ে আমরা এ কাজগুলো খুব সহজেই করতে পারি।
ব্যাংক পরিচালনা-
বহু আগে থেকেই মানুষের অর্থ-সম্পদের নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংকিং সেবা চালু হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকিং সেবার প্রভাব এতো বেশি বিস্তার লাভ করেছে যে, বেশিরভাগ আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেই এ সকল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে হচ্ছে। সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে তো লেনদেন হচ্ছেই, এছাড়াও কিছু কিছু ব্যাংক লেনদেনকে আরও সহজতর করার জন্য কিছু পদ্ধতি চালু করেছে। যেমন- বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নির্দিধায় লেনদেন করছে। ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের জন্য প্রত্যেক গ্রাহককে ব্যাংকে একটি একাউন্ট খুলতে হয়। পরবর্তীতে গ্রাহক তাদের সুবিধামত উক্ত একাউন্টে অর্থ জমা দেওয়া বা একাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করা অথবা অন্য একাউন্টে ব্যালেন্স ট্রান্সফার করতে পারবেন। এ সকল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অবশ্যই কম্পিটারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কম্পিউটার ছাড়া ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
বই প্রকাশনা-
পৃথিবীতে যে কত লক্ষ কোটি বই রয়েছে তার সঠিক কোন হিসাব নেই। বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ভাষায় অসংখ্য বই পৃথিবীতে রচিত হয়েছে। সকল বই প্রথমে কম্পিউটারে কম্পোজ করা হয়, তারপর কিছু ডিজাইনের কাজ করার পর কোন প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করা হয়। এই বইগুলো যদি হাতে লিখে পাবলিশ করা হতো তবে অনেক সময় লেগে যেতো এবং ভুল-ত্রুটিতে ভরা থাকতো। আবার অনেক লিখা বুঝাও যেতো না। তাছাড়া কম্পিউটারে কম্পোজ করার আরও একটি সুবিধা হলো- লিখা ভুল হলে খুব সহজে তা সংশোধন করা যায়। বই প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা যে কতটুকু তা একটু খেয়াল করলে সহজেই বুঝা যায়। বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন এ্যাপ এর মাধ্যমে খুব সহজে বই পড়া যায়। বিভিন্ন ধরণের বই অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে বা সরাসরি অনলাইনে পড়া যায়। এর দুইটি সুবিধা রয়েছে। যথা- (ক) বই ক্রয় করার খরচ বেঁচে যায় (খ) বই বহন করার ঝামেলা থাকে না।
গবেষণা-
গবেষকরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে থাকেন। গবেষণা করার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন জিনিষ আবিস্কার করে থাকেন। এই গবেষণামুলক কাজের জন্য অনেক তথ্যের প্রয়োজন হয়। যে তথ্যগুলো বর্তমানে একজন গবেষক অনলাইন থেকে খুব সহজেই সংগ্রহ করতে পারেন। এ সকল তথ্য সংগ্রহ করার জন্য কম্পিউটারের গুরুত্ব অনেক বেশী।
উপসংহার-
কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে গেলে একটি বই লিখেও শেষ করা যাবে না। সংক্ষেপে কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলার চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও আরও কত কাজে যে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় তা সংক্ষেপে বলে শেষ করা যাবে না। কম্পিউটার ছাড়া বিশ্ব যেন আজ অসহায়। অনেক জটিল কাজ খুবই সহজভাবে অল্প সময়ের মধ্যে কম্পিউটার এর মাধ্যমে আমরা করে থাকি। কম্পিউটার আমাদের জীবন-যাত্রার মান কতটা যে সহজ করে দিয়েছে এ আলোচনা থেকে তা সহজেই বুঝা যায়। বর্তমানে উন্নয়নমূলক যে কোন কাজ কম্পিউটার এর ব্যবহার ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। দেশের বর্তমান পরিবেশ এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা উচিৎ। কম্পিউটার শিক্ষা একটি জাতিকে স্বাবলম্বী করে তোলার পাশাপাশি উন্নত জীবন যাপনে অগ্রসর হওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দিন যত যাচ্ছে ততই কম্পিউটার এর ব্যবহার বাড়ছে। আস্তে আস্তে বাড়তেই থাকবে।
2 thoughts on “কম্পিউটার শিখে হন সামর্থবান, জাতির উন্নয়নে রাখুন অবদান (দ্বিতীয় অংশ)”