ভূমিকা-
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম- ছোট ছোট কালো দানার খুবই পরিচিত একটি মৌসুমী ফসল ”কালোজিরা”। কালোজিরার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে- “Nigella”। মানব দেহের বিভিন্ন রোগের প্রতিকার ও প্রতিষেধক হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই কালোজিরার বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। ইউনানী, কবিরাজি ও আয়ুর্বেদিক সহ বিভিন্ন চিকিৎসাতে কালোজিরার ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। কালোজিরা নিজে নিজেই এন্টিবায়োটিক বা এন্টিসেপটিক এর কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে জেনে তবেই কালোজিরা খাওয়া উচিত। কালোজিরা থেকে নির্গত তেলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যে তেলের ব্যবহার আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন, ফসফরাস ও ফসফেট। এছাড়াও কালোজিরার তেলে রয়েছে ভিটামিন-এ, বি, বি-২ এবং ভিটামিন-সি ছাড়াও জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান। কালোজিরার বিভিন্ন গুনাগুন বিশ্লেষণ করলে মনে হয় এটি যেন কালো জিরা নয় এটি হচ্ছে “কালো হিরা”।
কালোজিরার মধ্যে রয়েছে প্রায় শতাধিক উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুন। কালোজিরা নিয়মিত খাবারের ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কালোজিরার তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে রয়েছে- ভেষজ তেল ও চর্বি ৩৫ শতাংশ, শর্করা ৩৮ শতাংশ এবং আমিষ ২১ শতাংশ। এছাড়াও প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে।
কালোজিরা তেলের উপকারিতা-
কালোজিরা তেলের বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। কালোজিরার তেল মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন রোগ উপশম করে। বিশেষ করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যাথা নাশক হিসাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন- মাথা ব্যাথা, বাতের ব্যাথা, আর্থাইটিস, পিঠ ও ঘাড়ে ব্যাথা, মাংসপেশীর ব্যাথা, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যাথা ইত্যাদি। এছাড়া কালোজিরার তেল ব্যবহারে চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য্য বহুগুণে বৃদ্ধি করে। কালোজিরা তেলের উপকারিতা সম্পর্কে যত বেশী জানবেন ততো বেশি উপকৃত হবেন। আসুন হাদিস ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে কালোজিরা বা কালোজিরা তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।
মানব দেহের বিভিন্ন রোগ নিরাময় ও বহুবিধ উপকারিতায় কালোজিরার অবদান সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো-
হযরত খালিদ ইবনে সাদ (রা:) বলেন- আমরা যুদ্ধের এক অভিযানে বের হওয়ার পর আমাদের সঙ্গে থাকা গালিব ইবনে আবজার পথে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আমরা মদিনায় ফিরে আসার পরও তিনি অসুস্থ ছিলেন। ইবনে আবি আতিক তাঁকে দেখাশোনা করার জন্য এসে আমাদেরকে বললেন- তোমরা কালোজিরা সঙ্গে রেখো। কালোজিরার ৫টি বা ৭টি দানা গুঁড়া করে তাতে কয়েক ফোঁটা জয়তুনের তেল মিশিয়ে তার নাকের দুই পাশের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে ঢেলে দিবে। কেননা, আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি রাসুল (স:) কে বলতে শুনেছেন- কালোজিরা ‘সাম’ ছাড়া সকল রোগের ঔষধ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম- ‘সাম’ কী? তিনি বললেন- ‘সাম’ অর্থ হলো মৃত্যু। (সহীহ বুখারী, হাদীস-৫৬৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭)।
অন্য এক হাদীসে এসেছে-
হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন- আমি রাসুল (স:) কে বলতে শুনেছি কালোজিরায় মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের নিরাময় রয়েছে। হাব্বাতুস সাওদা অর্থ কালোজিরা এবং ‘আস-সাম’ অর্থ মৃত্যু। (ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৭, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ)
অন্য এক হাদীসে এসেছে-
হযরত আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত- রাসুল (স:) বলেন- তোমরা অবশ্যই এই কালো দানা ব্যবহার করবে, কেননা কালোজিরায় মৃত্যু ছাড়া সব রোগের নিরাময় রয়েছে।” (ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৮)।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও কালোজিরা তেলের উপকারিতা সঠিকভাবে জেনে ব্যবহারের মাধ্যমে কি কি উপকার হয়-
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণের রাখে
- যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে
- হৃদযন্ত্রকে সুস্থ্য ও সতেজ রাখে
- সুস্বাস্থ্য গঠন করে
- ত্বকের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে
- আর্থাইটিস ও মাংসপেশির ব্যথা কমায়
- কৃমি দূর করে
- শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়
- ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করে
- হাঁপানী ও শ্বাসকষ্ট দূর করে
- নিদ্রাহীনতা দূর করে
- মাথা ব্যাথা উপশম হয়
- শরীরের বিভিন্ন ব্যাথা দূর করে
- বাতের ব্যাথা উপশম করে
- মস্তিস্ক ও দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে
- চুল পড়া রোধ ও চুলের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে
- চর্ম জনিত রোগ উপশম হয়
- শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি করে
- খাবারের রুচি বৃদ্ধি পায়
- হজম সমস্যা দূরীকরণ
- অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করণ
- আমাশয় নিরাময় করে
- লিভারকে সুরক্ষিত রাখে
- শরীরের বিভিন্ন ধরণের ক্ষত বা ঘা শুকাতে
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
- দেহের বিভিন্ন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দূরীকরণ
- প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিকরণ
- ওজন কমাতে এবং শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝড়ায়
- দাঁতের ব্যাথা দূর করে
- পাইলস, কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত রোগ উপশম হয়
- মানব দেহ ফিটনেস রাখে
- চেহারার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে
- কিডনীর সমস্যা দূর করে
- দুর্বলতা কমায়
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও কালোজিরা তেলের উপকারিতা জেনে ব্যবহার করলে যে সকল রোগ নিরাময় হয়-
কালোজিরা বা এর তেল ব্যবহার করে যে সকল রোগ নিরাময় হয় সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো-
ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ-
জার্নাল অব ফিজিওলজি এন্ড ফার্মাকোলজির একটি গবেষণা থেকে জানা যায়- ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করার পরিমান কমাতে প্রতিদিন অন্তত ২ গ্রাম কালোজিরা খাওয়া প্রয়োজন। এ পদ্ধতি রক্তের শর্করার পরিমান কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এক চা চামচ কালোজিরার তেল এক কাপ হালকা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেতে পারেন। আশা করা যায় এতে উপকৃত হবেন।
যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কালোজিরা-
নারী-পুরুষ উভয়ের যৌন সঙ্গম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা অধিক পরিমানে বেড়ে যায়। কালোজিরা ব্যবহারে যৌন সঙ্গমে অক্ষম পুরুষের সক্ষমতা ফিরে পাবার সম্ভাবনা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। কালোজিরার তেলে প্রাকৃতিক শক্তি রয়েছে বিধায় এর তেল পুরুষের যৌনাঙ্গে নিয়মিত মালিশের ফলে পুরুষাঙ্গ লম্বা, মোটা ও শক্ত হয়। এছাড়া সহজে বীর্যপাত ঘটে না। তবে অবিবাহিত পুরুষের যৌনাঙ্গে কালোজিরার তেল মালিশ না করাই ভাল। কারণ তেল মালিশের ফলে পুরুষাঙ্গ উত্তেজিত হয়ে যায়। যার ফলে হস্তমৈথুন বা বীর্যপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তেল মালিশ করে যতটুকু উপকার হবে বীর্যপাতের ফলে তার চেয়ে বেশী ক্ষতি হবে। বিবাহিত পুরুষরা কালোজিরার তেল পুরুষাঙ্গে ব্যবহার করলে উপকৃত হবেন। যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনেকেই অনেক ধরণের ঔষধ খেয়ে থাকেন। যেগুলো বহু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কিন্তু কালোজিরা বা এর তেল ব্যবহারে ক্ষতির কোন সম্ভবনা নেই।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার সহজ উপায় জেনে নিন
হার্ট ভালো রাখতে কালোজিরা-
হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার জন্য কালোজিরার তেলে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া কালোজিরার তেল থেকে পাওয়া ওমেগা ৬ ও ৯ অ্যাসিড রক্ত জমাট বাঁধা ও ধমনিতে বাড়তি চাপ কমাতে সাহায্য করে। হার্টকে সুহাঁপানী বা শ্বাসকষ্টস্থ্য রাখতে প্রয়োজনীয় পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখা দরকার। কালোজিরার তেল হার্টকে সুস্থ্য ও সতেজ রাখে।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা-
কালোজিরা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং নিম্ন রক্তচাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অর্থাৎ কালোজিরা উচ্চ রক্তচাপ/নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া শরীরের কোলেস্টোরেল নিয়ন্ত্রণেও সহযোগীতা করে। সুতরাং ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন কালোজিরা বা এর তেল ব্যবহারে ব্যাপক উপকারিতা রয়েছে।
ওজন কমাতে এবং শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝড়াতে-
ওজন কমাতে এবং শরীরের বাড়তি মেদ ঝড়াতে কালোজিরা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝড়ে যাবে। এতে করে মোটা স্বাস্থ্য স্লিম হয়ে যাবে, ওজন কমে যাবে এবং শরীরের ফিটনেস ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া কালোজিরায় রয়েছে বিশেষ ধরণের আঁশ বা ফাইবার। যা অতিরিক্ত খাবারের চাহিদা কমাতে সহায়তা করবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিহীন প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমাতে কালোজিরার গুরুত্ব অপরিসীম।
মাথা ব্যাথা উপশম-
ঘরোয়াভাবে মাথা ব্যাথা উপশম করতে কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন। মাথা ব্যাথা শুরু হলে কালোজিরার তেল ভালভাবে মালিশ করলে মাথা ব্যাথা উপশম হয়। এছাড়া ১ চা চামচ কালোজিরার তেল ও সম পরিমান মধু ভালভাবে মিশিয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে ১০-১৫ দিন খেলে মাথা ব্যাথা সহ আরও অনেক রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাবেন ইনশা-আল্লহ্। এ চিকিৎসার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে কালোজিরা-
কালোজিরা মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। তবে এটি শুধু মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চালনই বৃদ্ধি করে না বরং সারা শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির ফলে এটি আমাদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং শরীরের ক্লান্তিও দূর করতে ভূমিকা রাখে।
সর্দি-কাশি উপশম করতে কালোজিরা-
এক চা চামচ কালোজিরার তেল এবং সমপরিমান মধু প্রতিদিন তিনবার খেলে সর্দি-কাশি অনেকাংশে কমে যায়। সর্দি জনিত কারণে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হলে একটি পাতলা কাপড়ে কিছু পরিমান কালোজিরা বেঁধে হাতের তালুতে ঘষে নাকের সামনে নিয়ে জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিলে আস্তে আস্তে নাক খুলে যাবে এবং নিশ্বাস নেওয়াটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া খাঁটি সরিষার তেল নাকের ভিতরে দিলে, মাথার চাঁদিতে বেশি করে দিয়ে ম্যাসেজ করলে, কিছু পরিমান তেল খেয়ে নিলে এবং সরিষার তেল গলায় ভালভাবে মালিশ করলে সর্দি-কাশির অনেক উপশম হয়।
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি উপশমে কালোজিরা-
হাঁপানী বা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে কালোজিরা বা এর তেল খুবই উপকারী খাদ্য। শ্বাসকষ্ট উপশমে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কালোজিরা বাটা বা ভর্তা রাখতে পারেন। এছাড়া এক চা চামচ কালোজিরার তেল এক কাপ রং চায়ের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ২/৩ বার করে সেবন করলেও হাঁপানী বা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ উপশম হবে।
দাঁত এর ব্যাথায় কালোজিরা-
দাঁতের ব্যাথা দূর করতেও কালোজিরার ভূমিকা রয়েছে। কালোজিরা গুঁড়া করে হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে কুলি করলে দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এ পদ্ধতি জিহ্বা, তালু ও দাঁতের মাড়ির জীবাণু ধ্বংস করে এবং দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে।
বাতের ব্যাথা দূর করতে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
বাতের ব্যাথায় আক্রান্ত রোগী অনেক যন্ত্রণায় ভূগে থাকেন। অনেক সময় ব্যাথা জনিত রোগের কারণ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরও রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়না। এই ধরণের ব্যাথা জনিত রোগ নিরাময়ে কালোজিরার তেল মালিশ করলে অনেক উপকার হয়। কালোজিরার তেলে থাকা এন্টি-ইনফালাম্যাটরি ত্বকের ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে মানেুষের দেহে প্রবেশ করে বাতের ব্যাথা উপশম করে। এছাড়া প্রতিদিন ২/৩ বার করে এক চা-চামচ কালোজিরার তেল, কাঁচা হলুদের রস এবং সমপরিমান মধু একসাথে মিশিয়ে ১৪-২১ দিন সেবন করলে বাতের ব্যাথা উপশম হয়।
চুলের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে কালোজিরার তেল ব্যবহার-
চুল মানুষের চেহারার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সুন্দর চুল চেহারার সৌন্দর্য্যকে আরও বৃদ্ধি করে। তবে বর্তমানে চুল পড়া একটি মারাত্মক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়- শতকরা ৫০ ভাগ মানুষই চুল পড়ে যাওয়া রোগে ভূগছেন। কালোজিরার তেল ব্যবহারের মাধ্যমে চুলের নিম্নলিখিত সমস্যার সমাধান করা যায়।
কালোজিরার তেল চুলের গোড়ায় ব্যবহারের ফলে চুলকে ভেতর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায় এবং অধিক মজবুত করে।
- চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
- চুল পড়া রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করে।
- রুক্ষ চুলকে কোমল করে।
- চুলকে ঝলমলে ও উজ্জ্বল করে।
- বয়স হওয়ার পূর্বেই চুল পাকা রোধ করে।
- চুলকে লম্বা, ঘন এবং দ্রুত বৃদ্ধি করে।
অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করণে কালোজিরা-
যাদের মাসিক অনিয়মিত হয় তারা কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। কালোজিরা খাওয়ার ফলে মাসিক নিয়মিত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিকরণে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
প্রসূতি মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে কালোজিরা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন নিয়ম করে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা গুড়া করে দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে নিয়ম করে ৭-১০ দিন কালোজিরা খেলে দেখবেন আপনার বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমানে বুকের দুধ পাবে ইনশা-আল্লহ্। তবে গর্ভাবস্থায় কালোজিরা বা এর তেল না খাওয়াই ভালো। কারণ অতিরিক্ত কালোজিরা খাওয়ার ফলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ-
শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে শিশুকে নিয়মিত কালোজিরা খাওয়াতে হবে। কালোজিরা খুব দ্রুত শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অনেক সহায়ক হিসাবে কাজ করে থাকে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে পরিমানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কালোজিরার তেল ২ বছরের কম বয়সের শিশুদের খাওয়ানো উচিত নয়।
পাইলস নিরাময়ে কালোজিরা-
পাইলস, কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ উপশম করতে নিয়মিত কালোজিরা খাবেন। নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করলে পাইলস, কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত রোগ দ্রুত উপশম হয়।
কালোজিরার প্রকৃত উপকারিতা পেতে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম জানা জরুরী-
কালোজিরার প্রকৃত উপকারিতা পেতে চাইলে, আপনাকে অবশ্যই কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে জেনেই ব্যবহার করতে হবে। এর বহুবিধ ব্যবহার পদ্ধতি রয়েছে। কোন ক্ষেত্রে এর তেল; কখনো এর গুঁড়া; কখনও মধু অথবা গরম পানির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়। কালোজিরার সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি জানার জন্য অবশ্যই কোন বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হতে হবে। কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম না জেনে খেয়াল-খুশি মতো ব্যবহারে এর সঠিক উপকারিতা পাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না।
এখানে একটি বিষয় মনে রাখবেন- রোগ, বালা-মসিবত আল্লহর পক্ষ থেকে আসে এবং মহান আল্লহই রোগ থেকে মুক্তি দান করেন। মহান আল্লহর ইচ্ছা ছাড়া কোন ঔষধেই রোগ ভালো হয় না। অনেক সময় খেয়াল করলে দেখা যায়- একই রোগে একই ঔষধ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে কাজ করে। কখনও রোগ ভালো হয় আবার কখনও হয় না। কারণ সেবনকৃত ঔষধের উপর যদি মহান আল্লহর হুকুম থাকে, তবে সে ঔষধ খেয়ে অসুখ ভালো হবে, অন্যথায় হবে না। যেহেতু রাসুল স: অসুস্থ্য হলে ঔষধ খেতে বলেছেন, তাই সুন্নাহ্ হিসেবে অসুস্থ্য হলে ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি মু’মিনের এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, ঔষধ খেলেই রোগ ভালো হয়না, বরং মহান আল্লহর ইচ্ছায়ই রোগ ভালো হয়।
বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম-
বিভিন্ন রোগ উপশম করতে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একই রকম। আবার কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম বা ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। কালোজিরা খাওয়ার কিছু নিয়ম বা ব্যবহার পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো-
- কখনও কালোজিরার দানা সরাসরি খেতে হয়।
- কোন কোন ক্ষেত্রে কালোজিরা গুঁড়া করে গরম পানি বা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হয়।
- কখনও কালোজিরার তেল মালিশ করতে হয়।
- কখনও কালোজিরা ভর্তা করে খেতে হয়।
- কালোজিরার তেল অনেক সময় মধু/গরম পানি/চা এর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হয়।
- কখনও কালোজিরার সঙ্গে রসুন খেতে হয়।
- ব্যবহারের সময়সীমা- কখনও ১ সপ্তাহ, কোন ক্ষেত্রে ১/২ সপ্তাহ আবার কখনও ২/৩ সপ্তাহ বা কমবেশী সময় লাগে।
- দিনে একবার, কখনো দুইবার আবার কোন ক্ষেত্রে ৩ বারও ব্যবহার করতে হয়।
খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে কালোজিরা-
খাদ্যে কালোজিরা ব্যবহারের ফলে খাবারের স্বাদ বহু গুনে বৃদ্ধি পায়। কালোজিরা ব্যবহার করে তৈরীকৃত খাবারের মজাই অন্যরকম। কালোজিরা ব্যবহারের মাধ্যমে খাবারের কিছু তালিকা নিচে দেওয়া হলো-
- কালোজিরা ভর্তা খেতে অনেক মজা।
- কালোজিরা পাঁচফোঁড়ন এর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাঁচফোঁড়ন দিয়ে রান্না করা ডাল বা সবজি অনেক মজাদার হয়।
- যে কোন ভাজির মধ্যে কালোজিরা দিলে স্বাদ অনেক পরিমানে বেড়ে যায়।
- বাজারে লোকাল অথবা মানসম্মত অনেক বিস্কুটে বিশেষ করে নোনতা জাতীয় বিস্কুটে কালোজিরা ব্যবহার করতে দেখা যায়। যে কারণে বিস্কুটগুলো খেতে অনেক মজাদার হয়।
- নিমকি অথবা তেলে ভাজা অনেক খাবারে কালোজিরা ব্যবহার করা হয়।
সতর্কতা- কালোজিরার বহু উপকারিতা রয়েছে বলেই ইচ্ছামত খাওয়া বা ব্যবহার করা যাবে না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে জেনে ব্যবহার করা উচিত। অতিরিক্ত ব্যবহারে ক্ষতির আশংকা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় কালোজিরা খাওয়া বা এর ব্যবহার না করাই ভালো। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়া চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে কালোজিরা সম্পর্কে এই তথ্যগুলো বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সুতরাং এখানে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। অন্যথায় কেউ কোন প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন হলে আমরা কোনভাবেই দায়ভার গ্রহণ করবো না।
উপসংহার-
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায়- কালোজিরা মৃত্য ব্যতীত সকল রোগের মহৌষধ বা এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। একজন মু’মিন বান্দা হিসাবে কালোজিরা সম্পর্কে রাসুল (স:) এর হাদিসগুলো মনে প্রাণে বিশ্বাস করা উচিত। তাঁর কথা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। কারণ তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলেন নি। তিনি যা বলতেন সবই আল্লহর পক্ষ থেকে বলতেন। তবে এখানে একটি কথা বলে রাখতে চাই, তা হলো- কালোজিরা খাওয়ার পরও অনেকের রোগ ভালো হয় না। এমন যাদের হয় তাদেরকে বলব- আপনি সঠিক পরিমানে বা সঠিক নিয়মে কালোজিরা ব্যবহার করছেন না। কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে জেনে নিয়মিত কালোজিরা খেয়ে দেখুন, আপনি বিভিন্ন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন। সকল বয়সের মানুষ কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আরও জানতে
2 thoughts on “কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা”