খুশকি দূর করার উপায় ও খুশকি হওয়ার কারণ

খুশকি দূর করার উপায় ও খুশকি হওয়ার কারণ

ভূমিকা-

খুশকি দূর করার উপায়- মানুষের শরীরের চর্মরোগের একটি হলো খুশকি। মাথায় ছোট ছোট সাদা আশেঁর মত গুড়াকেই খুশকি বলে। মাথার ত্বকে ফাঙ্গাসের পরিমান বেড়ে গিয়ে এ সমস্যা হয়ে থাকে। এই সমস্যাটা নারী-পুরুষ উভয়েই হয়ে থাকে। খুশকির পরিমান বেড়ে গেলে মাথায় চুলকানি শুরু হয়। খুশকির প্রভাবে মাথার চুলের গ্রোথ কমে যায়, যার ফলে চুল পড়া বেড়ে যায়। আসুন জেনে নেই খুশকি দূর করার উপায় ও খুশকি হওয়ার কিছু কারণ।

খুশকি নিয়ে কিছু প্রশ্ন-

প্রশ্ন- খুশকি কি ধরণের রোগ?

উত্তর- এটি মূলত চর্মরোগ।

প্রশ্ন- এ রোগ সাধারণত কখন বেশি হয়?

উত্তর- শীতকালে বেশি হয়।

প্রশ্ন- খুশকি দূর করার কোন উপায় আছে কি?

উত্তর- অবশ্যই আছে। প্রাকৃতিকভাবে খুশকি দূর করার অনেক উপায় আছে।

প্রশ্ন- খুশকির কারণে কি চুলের কোন ক্ষতি হয়?

উত্তর- অবশ্যই চুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। চুলের সৌন্দর্য নষ্ট করে এবং চুল পড়া বৃদ্ধি করে।

প্রশ্ন- খুশকি কেন হয়?

উত্তর- মাথায় খুশকি হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। মাথায় খুশকি হওয়ার কিছু কারণ তুলে ধরা হলো।

খুশকি দূর করার উপায় সমূহ-

বিভিন্ন পদ্ধতিতে খুশকি দূর করা যায়। নিচে খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে কিছু দিক নির্দেশনা বা পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-

শ্যাম্পু ব্যবহার-

ছত্রাক জনিত কারণে অনেক খুশকির জন্ম হয়। তাই খুশকির জন্য ছাত্রক নাশক এন্টিডেন্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করলে খুশকির পরিমান কমে যাবে। আর যদি এন্টিডেন্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারে খুশকি না কমে তবে চর্মরোগ বিষেজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। চুলে শ্যাম্পু দেওয়ার পর মাথা ভাল করে দুতে হবে। মাথা ভাল করে না দুলে চুলে শ্যাম্পু লেগে থেকেই খুশকির জন্ম হতে পারে।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন-

খাদ্যাভ্যাস যেমন মানুষের শারীরিক সুস্থ্যতার উপর প্রভাব ফেলে তেমনি ত্বকের উপরও। তাই খুশকি নিয়ন্ত্রন করতে প্রতিদিন ভিটামিন/প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে।

খুশকি দূর করার উপায় এর মূল বিষয় হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা-

মাথায় ময়লা জমে লোমকূপ বন্ধ হয়ে ছত্রাক জন্ম নেয়। ফলে খুশকির পরিমান বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন ভালোভাবে চুল পরিষ্কার করুন।

খুশকি দূর করার উপায় মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার-

প্রতিদিনের কাজের জন্য আমাদেরকে বাহিরে যেতে। যার ফলে রাস্তার ধুলিবালি আমাদের মাথা সহ শরিরের বিভিন্ন অংশে লেগে যায়। এর এই ধুলিবালি হতে খুশকির জন্ম হয়। তাই রাস্তার ধুলিবালি থেকে মাথার চুলকে রক্ষা করতে মাথায় স্কার্ফ বা টুপি ব্যবহার করুন।

ভেজা চুল শুকিয়ে নেওয়া- খুশকি দূর করার উপায়

ভেজা চুলে রাস্তায় বের হলে রাস্তার ধুলিবালি চুলে লেগে গিয়ে খুশকির জন্ম হতে পারে। তাই রাস্তার বের হওয়ার আগে চুল ভালভাবে শুকিয়ে তার পার চুল ডেকে রাস্তায় বের হন। তবে তারাতারি চুল শুকানোর জন্য চুলে হিট দেওয়া যাবে না। বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে চুল শুকানোই উত্তম।

অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার- খুশকি দূর করার উপায়

খুশকির সমস্যা সমাধানে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার গরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই খুশকির সমস্যা হতে মুক্তি পেতে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করুন। পানি ও অ্যাপল সাইডার ভিনিগার সমপারিমানে একসাথে ভালভাবে মিশিয়ে মাথার ত্বকে আসতে করে মালিশ করুন। কিছু সময় পর ভালো করে ধুয়ে নিন। তবে এর ব্যবহার এক সপ্তাবে দুই বারের বেশি না করাই ভাল।

গ্রীন টি ব্যবহার-

খুশকি কমাতে গ্রীন টির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রীন টিতে ব্যাক্টেরিয়া রোধী উপাদান থাকায় এটা মাতার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখত সহায়তে করে। আদা কাপ গরম পানিতে একটি টি ব্যাগ ভিজিয়ে রাখুন পানি ঠান্ডা হওয়া অবধী। পানি ঠান্ডা হলে টি ব্যাগটি উঠিয়ে এই পানি মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। বেশ কিছু সময় পার পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।

চুল আঁচড়ানো-

নিয়মিত চুল আঁচড়ালে মাথার ত্বকের মৃত কোষগুলো ঝড়ে যায়, যার ফলে খুশকির পরিমান কমে যায়। এছাড়া চুল আঁচড়ালে চুলের গোড়ায় জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার হয়েই খুশকির পরিমান কমে যাবে। তবে চুল আঁচড়ানোর সময় ব্রাশ ব্যবহার না করে চিরুনি ব্যবহার করাই ভাল।

খুশকি দূর করার উপায় এর আরও একটি পদ্ধতি লেবুর রস-

লেবুতে রয়েছে এসিড, যা মাথায় ত্বকে জন্ম হওয়া ছত্রাক বা ফাঙ্গস ধ্বংশ করে ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। ঠান্ডা পানির সাথে পরিমানমত লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তা মাথায় ত্বকে হালকা ভাবে মালিশ করুন। মালিশ করার কিছু সময় পর মাথা ভালো করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। তবে লেবুর রস সপ্ততে সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।

মানসিক চাপ কমান-

মানসিক চাপ শারেরিক সুস্থ্যার উপর অনেক বেশি প্রভাব পেলে। মানসিক চাপ দীর্ঘস্থায়ী হলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। খুশকি তৈরিতে মানসিক চাপ সরাসরি ভূমিকা না রাকলেই তা ত্বকের শুষ্কতা বাড়িয়ে দেয়। যা পরবর্তীতে খুশকির রূপ দেয়। তাই মানসিক চাপ কমান। এছাড়াও মানসিক চাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

এ্যালোভেরা ব্যবহার করুন-

ত্বকের প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসাবে অনেক যুক আগে থেকেই অ্যালোভেরা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যালোভেরা ত্বকের রক্ষতা কমিয়ে ত্বকের আদ্রতা বাড়িয়ে দেয় যার ফলে খুশকির পরিমান কমে যায়। এছাড়াও অ্যালোভেরায় অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈীশষ্ট্য থাকায় ইহা খুমকি হতে ত্বককে রক্ষা করে।

সৌন্দর্য্য ও ফিটনেস সম্পর্কে জানতে আরও পড়ুন

দাঁতের যত্ন নিন সুস্থ্য থাকুন
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার
শীতে ত্বকের যত্ন ও পরিচর্যা

নারিকেল তেল ব্যবহার-

চুলের স্বাস্থ্য রক্ষ করতে নারিকেল তেলের গুরত্ব অনেক। নারিকেল তেল ত্বকের আদ্রতা বাড়িয়ে দিয়ে ত্বককে রাখে সতেজ। তেল চুলের গোড়ায় প্রবেশ করে চুলে প্রোটিন এর যোগার দেয়। যার ফলে ত্বকের সংক্রমণ কমে যায় এবং খুশকির সমস্যার সমাধান হয়। এক সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার চুলে গোড়ায় নারিকেল তেল এর মালিশ করুন। এছাড়াও নারিকেল তেলে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য খুশকি তৈরী ছত্রাকের বিরুদ্ধে কাজ করে।

টক দই-

টকদই চুলের উজ্জলতা বাড়িয়ে দেয় এবং খুশকি দূর করে। তাই খুশকি দূর করতে সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার টক দই ব্যবহার করুন। প্রথমে টকদই ভালভাবে ফেটিয়ে নেন। তারপর মাথার ত্বকে আসতে করে মালিশ করুন। কিছু সময় পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন।

বেকিং সোডা-

বেকিং সোডায় রয়েছে সোডার অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য যা খুশকি জন্ম দেয় এমন ছত্রাক ধ্বংশ করে। খুশকি দূর করতে প্রথমে চুলকে ভালো ভাবে বিজিয়ে নিন। তার পর বেকিং সোডা পানি সাথে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসেজ করুন। কিছুক্ষন পর ভালো ভাবে ধুয়ে নিন। এতে খুশকির সমস্যা কমে যাবে।

মাথায় খুশকি হওয়ার কিছু কারণ-

মাথায় ময়লা-

যারা নিয়মিত ঘরের বাইরে বের হন, রাস্তায় চলাচলের কারণে প্রচুর ধুলাবালি এসে তাদের মাথায় বা চুলে লেগে যায়। দীর্ঘক্ষণ মাথায় ময়লা জমে থাকার কারণে লোম কূপ বন্ধ হয়ে যায় এবং ছত্রাক জন্ম নেয়। যার ফলে মাথায় খুশকি হয়। শুধু ঘরের বাইরে বের হওয়ার কারণেই নয় অন্যান্য কারণেও মাথায় ময়লা হতে পারে। আর এই ময়লা জনিত কারণে মাথায় খুশকি হওয়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে।

মাথার ত্বকের শুষ্কতা-

শীতকালের বাতাস শুষ্ক হওয়ায় ত্বকের আদ্রতা কমে এবং ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে শীতকালে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।

মাথায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার-

মাথায় তেল ব্যবহারে ত্বকের আদ্রতা বাড়ে। অতিরিক্ত তেল ব্যবহারে লোমকূপ বন্ধ হয়ে ছত্রাক জন্ম নেয়। যার ফলে খুশকির জন্ম হয়।

চুল না আঁচড়ানো-

নিয়মিত চুল আঁচড়ানোর ফলে ত্বকের ময়লা পরিস্কার হয়। চুল না আঁচড়ালে লোমকুপগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মাথায় গরম পানি ব্যবহার-

শীতকালে পানি অনেক ঠান্ডা থাকে। কনকনে শীতে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা অনেকেরই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই আমরা অধিকাংশই কষ্ট দূর করার জন্য বা শারীরিক প্রশান্তির জন্য গোসলের সময় গরম পানি ব্যবহার করে থাকি। মাথায় গরম পানি ব্যবহারের ফলে ত্বকের আদ্রতা কমে গিয়ে খুশকির জন্ম হয়।

খাদ্য অভ্যাস-

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যে ধরণের খাদ্য থাকে তার বেশিরভাগই অপুষ্টিকর খাবার। পুষ্টি জাতীয়, ভিটামিন সমৃদ্ধ, প্রোটিন যুক্ত খাবার না খাওয়ার কারণে পুষ্টিহীনতা এবং অধিক চর্বি, ঝাল, মসলা যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলেও খুশকি হতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া-

বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হই। এ কারণেও খুশকি হতে পারে।

জ্বীনগত বা বংশগত কারণ-

জ্বীনগত বা বংশগত কারণেও অনেকের খুশকি হয়। পরিবারের অন্য কারো মাথায় খুশকি থাকলে সেখান থেকেও খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মাথার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী পণ্য ব্যবহার না করা-

মানুষের হাত-পায়ের ত্বকের মতো মাথার ত্বকেরও ভিন্নতা রয়েছে। তাই ত্বকের ধরণ অনুযায়ী পণ্য ব্যবহার না করলে মাথায় খুশকি হতে পারে।

এলার্জি-

মানব দেহের বিভিন্ন রোগের মধ্যে এলার্জি একটি রোগ। এলার্জি বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। এলার্জি প্রভাব এতটাই বেশী যে, পরীক্ষা করলে দেখা যাবে যে অধিকাংশ মানুষই এলার্জি রোগে আক্রান্ত। এলার্জির প্রভাবেও অনেক সময় খুশকির জন্ম হয়।

চুল কালার করা-

চুল কালার করলে চুলের গোড়ার ছিন্দ্র বন্ধ হয়ে খুশকি হতে পারে। এলার্জি রোগীরা চুল কালার করলে খুশকি অনেক বেড়ে যায়।

উপসংহার-

খুশকি একটি চর্মরোগ। বিভিন্ন কারণে এ রোগটি হয়ে থাকে। খুশকি অনেক সময় লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেননা খুশকি চুলের সৌন্দর্য্যকে নষ্ট করে। শুধু তাই-ই নয় কালো ধরণের পোষাক পড়লে খুশকির গুড়া কালো পোষাকের উপর একেবারে ফুটে উঠে যা খুবই খারাপ দেখায়। এর ফলে অন্যরা অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে মনে করে। খুবই বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। এ সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য খুশকি দূর করার উপায় ভালভাবে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ে খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনেছেন।

খুশকি সম্পর্কে আরও পড়ুন

2 thoughts on “খুশকি দূর করার উপায় ও খুশকি হওয়ার কারণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *