চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার

চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার

ভূমিকা-

চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার- চুল মানুষের চেহারার সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি করে। মাথা ভর্তি কালো চুলে মানুষের বয়স কম দেখায়। আবার টাক মাথায় কম বয়সের মানুষকে বয়স্ক মনে হয়। তাই চুল নিয়ে মানুষের উদ্ধিগ্নতা একটু বেশি। মানুষের চুলের আয়ু দুই বছর থেকে আট বছর। তাই অনেক সময় ঘুম থেকে উঠার পর বালিশের উপর চুল পড়ে থাকতে দেখা যায়। আবার মাথা আঁচড়ানোর পরে চিরনীতেও চুল লেগে থাকতে দেখা যায়। স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন একজন মানুষের মাথা থেকে ১০০টা পর্যন্ত চুল পড়ে। কিন্তু এর বেশি চুল পড়লে সেটি স্বাভাবিক বিষয় নয়। সেক্ষেত্রে চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার জেনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

আরও একটি বিষয় হলো- প্রতিদিন চুল পড়লে এবং চুলের আয়ু ২-৮ বছর হলে একটা সময় মাথায় টাক পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় না। কেননা, প্রতিনিয়ত স্বাভাবিকভাবে যে পরিমান চুল পড়ে, ঠিক একই পরিমান নতুন চুল গজায়। কিন্তু চুল পড়ে যাওয়ার তুলনায় যদি নতুন করে চুল গজানোর পরিমান কমে যায়, তবে মাথায় টাক পড়ে যায় বা মাথার চুল কমে যায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকের চুল পড়ার পরিমানও বেড়ে যায়। এছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারনেও চুল পড়ার পরিমান বেড়ে যায়। আর চুল পড়ার সমস্যাটা মহিলা পরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে হয়। যে কোন সমস্যার কারণ জানলে তা প্রতিকার করা সহজ হয়। আসুন জেনে নেই চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।

চুল পড়ার কারণ-

চুলের গ্রোথ কমে যাওয়া-

মানুষের মাথার সব চুলের গ্রোথ সময় নয় এবং অনেক চুলের গ্রোথও হয় না। সাধারনত মানুষের মাথার দশ শতাংশ চুলের গ্রোথ হয় না, বাকি নব্বাই শতাংশ চুলের গ্রোথ হয়। গ্রোথ হওয়া চুলগুলো মাথায় থেকে যায় আর যেই চুলগুলোর গ্রোথ বন্ধ হয়ে যায় সেই চুলগুলো আসতে আসতে ঝাড়ে যায়। ঝড়ে পড়া চুলগুলোর স্থানে আবার নতুন করে চুল গজায়। বিশেষজ্ঞদের মতে চুলের গ্রোথ কমে প্রতিদিন একশতটির মতো চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি চুল পড়ার পরিমান একশতর বেশি হয় তাহলে চুলের গ্রোথ দশ শতাংশর বেশি কমে গেছে। চুলের গ্রোথ কমে যাওয়া কারণ হতে পারে খাদ্য অব্যাস, অনিয়স্ত্রিত জীবনযাপন এবং দীর্ঘসময় অসুস্থ্যতা ইত্যাদি। চুলের গ্রোথ দশ শতাংশের বেশি কমে গেলে চর্মরোগ বিশেজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।

খাদ্যভাস-

মানুষের শারীরিক সুস্থ্যতার জন্য যেই রকম ভিটামিন, প্রোটিন এবং খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার প্রয়োজন তেমনি চুলের সৌন্দর্য্য ও স্থায়িত্বের জন্যও এইসব খাবার খাওয়া প্রয়োজন। আমাদের খাদ্যাভ্যাসে উপর চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। খাদ্যাভ্যাস শুধু শরীরের ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য নয়, ইহার চুলের স্বাস্থ্যের উপরও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন ই ঘাটতি এবং পুষ্টিহীনতার জন্য চুল পরার পরিমান বেড়ে যেতে পারে বহুগুণ। অতিরিক্ত পরিমানে চর্বিযুক্ত, চিনিযুক্ত এবং রিফাইন্ড খাবার খাওয়ার ফলে চুলের গ্রোথ কমে যায় অনেকগুণ যার ফলে চুলও ঝড়ে পড়ে মাত্রারিক্ত পরিমানে।

চুলের গ্রোথ ভাড়াতে আপনার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন চর্বিযুক্ত মুরগি, চর্বিযুক্ত মাছ, মটরশুটি, মসুর, কম ফ্যাটযুক্ত দই, দুধ, বীজ, বাদাম, ডিম, ইলিশ, টুনা, সার্ডিন, স্যামন, ট্রাউট, হেরিং, কড মাছের তেল, ফ্ল্যাক্সসিড তেল বা তিসির তেল, ওয়ালনাট, ক্যানোলা ওয়েল, চিয়া সিড, সয়াবিন, সবুজ পাতাওলা সবজি, চিনাবাদাম, আখরোট, বাদাম, উদ্ভিজ্জ তেল, কুসুম, গম, সয়াবিন, সূর্যমুখী, কলা, পালংশাক, খোসাসহ আলু ও ঢ্যাঁড়স। এই খাবারগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, ভিটামিন, ফসফরাস, ম্যাগনিসিয়াম ও ওমেগা -৩। যা চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি করে চুলকে করে সিল্কি এবং স্ট্রং। আয়রন ও ক্যালসিয়ামের অভাবেই চুল পরতে পারে। তবে এই সমস্যাটা মেয়েদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়। তাই আপনার খাবারের তালিকায় আয়রন ও ক্যালসিলয়াম যুক্ত উপাদান রাখুন।

সূর্য হতে নিশ্রিত UV রশ্মি-

সূর্য হতে প্রতিনিয়ত নিশ্রিত ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্যও ক্ষতিকর। ইউভি রশ্মির প্রভাবে চুলে শুষ্কতার পরিমান বেড়ে গিয়ে চুল ভঙ্গুর ও দুর্বল হয়ে চুল পড়ার পরিমান বেড়ে যায় স্বাভাবিক এর ছেয়ে বেশি। তাই ক্ষতিকর এই ইউভি রশ্মির প্রভাব হতে চুল ও ত্বককে রক্ষা করতে ছাতা ব্যবহার করুন। তা সম্ভব না হলে হ্যাট বা স্কার্ফ ব্যবহার করুন।

চুলের সঠিক যত্ন না নেওয়া-

ছোট সময় বাবা মা আমাদের চুলের যত্ন নিলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের উপর আসে। তার সাথে কাজের ব্যাস্ততাও বেড়ে যাওয়ায শরীর ও চুলের যত্ন নেওয়ার সময় হয় না। সময় অভাবে চুল আঁচড়ানোর হয় না। কিন্তু প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ মিনিট বা তার বেশি সময় চুল আঁচড়ানোর প্রয়োজন। রোটিন উনুসারে প্রতিদিন চুল আঁচড়ালে চুলের গোড়ায় রক্ত চলাচলা বাড়ে। আর চুলের গোড়ায় রক্ত চলাচলা বাড়লে চুলের স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে। ঘুমানোর পূর্বে লম্বা চুল বেঁধে নিতে হবে, তা না হলে চুলের আগা ফেটে গিয়ে ভাঙতে শুরু করবে। ভিজা চুল নিয়ে বাহিরে গেলে চুল ফেটে যেতে পারে,তাই গোসলের পর চুল ভালভাবে শুকিয়ে তার পর বাহিরে যেতে হবে।

চুলের ধরণ অনুযায়ী পণ্য ব্যবহার করা-

মানুষের ত্বকের যে রকম ভিন্নতা আছে তেমনে চুলের ভিন্নতা আছে। চুল ঝরে যাওয়ার আরেকট কারণ হলো চুলের ধরন অনুযায়ী পণ্য ব্যবহার না করা। শ্যাম্পু বা তেল কিনার আগে এতে কি কি উপাদন আছে তা দেখে নেওয়া। একই উপাদানে তৈরী শ্যাম্পু ও হেয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার কারলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

চুলে ময়লা হওয়া-

নন্দিক কাজের জন্য বাহিরে যেতে হয় আর বাহিরে যাওয়ার ফলে রাস্তার ধুলো বালি চুলে আসে। তাই প্রতিদিন কাজে যাওয়ার আগে অথবা রাস্থায় বের হওয়ার সময় মাথায় হ্যাড বা স্কার্ফ ব্যবহার করুন ও নিয়মিত চুল পরিস্কার করুন, তা না করলেও চুল পড়া স্বাভাবিকের ছেয়ে বেড়ে যাবে। প্রতিদিন চুল পরিষ্কার করুন।

খুশকির প্রভাব-

অতিরিক্ত খুশকির কারণে চুলের গুড়া দুর্বল হয়ে চুলের গ্রোথ কমে গিয়ে চুল পড়া বেড়ে যায়। তাই যাদের মাথায় খুশকি আছে তাদের এন্ট্রিডেনড্রাপ শ্যাম্পু ব্যবহার করা দরকার। যদি এন্ট্রিডেনড্রপ ব্যবহারে খুশকি না কমলে চর্মরোগ বিশেজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।

ভেজা চুল আঁচড়ানো চুল পড়ার কারণ-

অনেকেই গোসলের পর ভিজা অবস্থায় চুল আঁচড়ানো শুরু করে। ভিজা অবস্থায় চুল জট লাগানো থাকে এবং চুলের গুড়া নরম থাকে। যার ফলে ভিজা অবস্থায় চুল আঁচড়ালে চুল ভেঙ্গে যায় এবং গোড়া হতে উঠে আসে। তাই গোসলের পর হাতের আঙ্গুল দিয়ে আস্তে আস্তে চুলের জটলা সাড়িয়ে শুকনো নরম কাপড় দিয়ে চুল ভালভাবে মুছে অথবা ফ্যানের বাতাশে চুল শুকিয়ে তারপর চুল আঁচরান। এতে চুল ঝরবেও কম ভাঙ্গবেও কম।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়

ডায়াবেটিস কেন হয় এবং ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কি?

দাঁতের যত্ন নিন সুস্থ্য থাকুন

শীতে ত্বকের যত্ন ও পরিচর্যা

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

কালার ব্যবহার করা-

ফ্যাশন করার জন্য অনেকেই চুলে কালার ব্যবহার করে। আবার অনেকের বয়সের জন্য এবং জীনগত কারণে চুল সাদা হয়ে যায় এবং সাদা চুল কালো করার জন্যও অনেকে কালার ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু রং ব্যবহার চুল ও ত্বক উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। চুলে ব্যবহৃত কালারে কেমিক্যাল চুল পাড়া বৃদ্ধি করে দেয়। তার সাথে চুখের ক্ষতি করে, ত্বকের ক্যানসারের প্রবনতা বাড়িয়ে দেয়।

চুলে হিট দেওয়া- এটিও চুল পড়ার কারণ

শীতের সময় শারেরিক আরামের জন্য গোসলের সময় অনেকেই গরম পানি দিয়ে গোসল করে। কিন্ত গরম পানি মাথায় ব্যবহার করলে চুলের আদ্রতা কমে গিয়ে চুল পাড়া বেড়ে যেতে পারে। তাই শীতে গোসল করার সময় শারিরে গরম পানি ব্যবহার করলেও তা মাথায় দিবেন না। এছাড়া অনেকেই কাজের ব্যবস্থার ও সময়ের সল্পতার জন্য হেয়ার ড্রায়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার করে। হেয়ার ড্রায়ার এর বাতাস সরাসরি চুলে লাগে বলে চুলের ভঙ্গুর এর পরিমান বেড়ে যায়। তবে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারের সময় যদি কুলিং সুইচ অন করে নেওয়া হয় এবং স্ট্রেইনটনার সরাসরি চুলে ব্যবহার না করে হয় অথবা চুলে হিট প্রটেক্টিভ ব্যবহার করা হয় তবে চুলের ভঙ্গুর এর পরিমান কম হবে। ফ্যানের বাতাস আদ্র হওয়ায়, ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানো উত্তম।

অতিরিক্ত টানটান করে চুল বাঁধার জন্য চুল ঝরে পড়ে-

লম্বা চুল গোছিয়ে রাখার জন্য খোঁপা করতে হয়। এছাড়া অনেকে ফ্যাশনের জন্যও খোঁপা ব্যবহার করে। খোঁপা ব্যবহারে চুল গোছানো থাকলেও এবং দেখতে সুন্দর লাগলেও এ বিষয়ে সর্তকতা প্রয়োজন। অধিক টানটান করে খোঁপা বাধলে এবং দীর্গক্ষণ বেধে রাখলে চুল গোড়া হতে আগলা হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়, যার ফলে চুল পড়ার পরিমান বেড়ে যায়। তাই চুলে খোঁপা বা ঝুটি করা সময় হলকাভাবে বাধবেন এবং একটানা একই হেয়ারস্টালন না করে কিছু দিন পর পর হেয়ারস্টাইল পরিবর্তন করুন।

বংশগত কারণে চুল পড়া-

বংশগত কারণে আমাদের অনেক ধরণের রোগ হতে পারে। যার একটি হলো চুল পড়ে যাওয়া। বাবা-মা’র বংশের মানুষের চুল পড়ার সমস্যা থাকলেও চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাবে চুল ঝরে পড়া-

ঔষধ হলো দুই পাশ ধারালো তরবারির মত। যেমন প্রতিক্রিয়া আছে তেমনি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাবে মাথার চুল ঝরে পড়ে। ক্যান্সারের ক্যামুথ্যারাপি দেওয়ার ফলেও চুল ঝরে এবং অ্যান্টি-বায়োটিকের কোর্স কমপ্লিট করার ফলে চুল ঝরে। তাই এই সময়টাতে পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন এবং সাথে সাথে প্রতিদিনের খাবারে প্রাটিনযুক্ত খাবারগুলো যোগ করুন। ঔষধ গ্রহন করার পূর্বে অবশ্যই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানুন।

এ্যান্ডোজেনিক হরমোন এর প্রভাব-

এ্যান্ডোজেনিক হরমোন এর প্রভাবে চুল পড়ে। পুরুষের শরীরের এই হরমোন এর পরিমান বেশী তাই এর প্রভাবে অনেক সময় পুরুষের মাথায় টাক পড়ে যায়। পরুষের তুলনায় নারীদের অ্যান্ডোজেনিক হরমোন এর পরিমান কম হলেও ঋতুশ্রব চালাকালীন অবস্থায় এবং তার পরে এই হরমোন এর পরিমান আনুপাতিক হারে বেড়ে যায়। তখন হঠাৎ করে চুল পড়ার পরিমান স্বাভাবিক এর চেয়ে বেড়ে যায়।

চুল পড়ার প্রতিকার-

3 thoughts on “চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *