দাঁতের যত্ন নিন সুস্থ্য থাকুন

দাঁতের যত্ন নিন সুস্থ্য থাকুন

ভূমিকা-

দাঁতের যত্ন- মানুষের সৌন্দর্যের প্রধান মাপকাঠি হল মুখমন্ডল। আর মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে সুন্দর ও ঝকঝকে দাঁত। দাঁত সুন্দর হলে প্রাণবন্তকরভাবে হাসা যায়। দাঁতগুলোকে সুস্থ্য, সুন্দর ও ঝকঝকে রাখতে সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন নিতে হবে।সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন নিলে দাঁতের মাড়ি শক্ত ও মজবুত হয় এবং মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় না। আমরা আসলে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝি না। দাঁতের মর্যাদা বুঝে সুস্থ্য থাকতেই দাঁতের যত্ন নেওয়া উচিত।

দাঁতের যত্ন না নিলে কি কি সমস্যা হতে পারে?

০১) মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়
০২) দাঁতে ব্যাথা হয়
০৩) দাঁত যন্ত্রণা করে
০৪) দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়
০৫) দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত ও পুঁজ বের হয়
০৬) দাঁত পড়ে যায়
০৭) দাঁতের উজ্জলতা নষ্ট হয়ে যায়
০৮) দাঁত ছিদ্র বা গর্ত হয়ে যায়
০৯) ঠান্ডা জাতীয় কিছু খেলে দাঁত শিরশির করে
১০) দাঁতের ভিতর ও বাহির অংশে লালচে দাগ পড়ে যায়
১১) দাঁতের মাড়িতে পাথর হয়
১২) দাঁত ক্ষয় হয় ও ভেঙ্গে যায়

দাঁতের যত্ন নিতে নিয়মিত ব্রাশ করা-

দাঁতের যত্ন নিতে প্রতিদিন সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। দাঁতের ভিতরে ও বাহিরের অংশে, মাড়ির উপরে ও নিচের দাঁতে এবং সকল দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে ভালভাবে ব্রাশ করতে হবে। দাঁতের ভিতরের অংশে এবং মাড়িতে ভালভাবে ব্রাশ না করার কারণে দাঁতে কেভিটি জমা হয়, দাঁত শিরশির করে, দাঁত গর্ত ও ক্ষয় হয়ে যায়। এজন্য দাঁতের এপাশ-ওপাশ, উপর-নিচ করে ভালভাবে দাঁত ব্রাশ করা উচিত। এখানে আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, ১টি ব্রাশ ৩ মাসের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে দুই মাস ব্যবহার করলে আরও ভাল হয়। কেননা, দীর্ঘ সময় ব্যবহারের ফলে ব্রাশের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেকেই শক্ত ব্রাশ আবার কেউ কেউ অধিক নরম ব্রাশ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এতে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমান বেশি। শক্ত ব্রাশ ব্যবহারের ফলে মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়। আর ব্রাশ অধিক নরম হলে দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার হয় না। তাই অধিক নরম বা খুবই শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করা উচিত নয়।

সৌন্দর্য্য ও ফিটনেস সম্পর্কে জানতে আরও পড়ুন
মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ ও খুশকি দূর করার উপায়
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার
শীতে ত্বকের যত্ন ও পরিচর্যা

টুথ পেষ্ট ব্যবহার-

একই কোম্পানীর টুথ পেষ্ট বা টুথ পাউডার ব্যবহার না করে বিভিন্ন কোম্পানীর টুথ পেষ্ট বা টুথ পাউডার ব্যবহার করা ভালো। কারণ একেক কোম্পানীর টুথ পেষ্ট বা টুথ পাউডারে একেক ধরনের উপদান থাকে। দাঁত ব্রাশ করার ক্ষেত্রে গোল ও কয়লা বা ছাই ব্যবহার করা উচিত নয়। অধিক ক্ষারযুক্ত টুথ পেষ্ঠ বা টুথ পাউডার ব্যবহার করা হতে বিরত থাকা প্রয়োজন। অধিক ক্ষারযুক্ত পেষ্ঠ বা টুথ পাউডার বেশি পরিক্ষার হয় পাশাপাশি দাঁতের উপরের অংশ ক্রয় হয় এতে দাঁত শির শির করে। প্রতিদিন খাবার খাওয়ার পর ব্রাশ করতে হবে। ঘুমানোর পূর্বে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। খাবার খাওয়ার পর ভালভাবে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। ব্রাশ না করতে পারলে ভালো ভাবে পানি দিয়ে কলকলা করে কুলি করতে হবে।

অনেকের দাঁতে ফাঁক থাকে যার ফলে খাবার খাওয়ার পর দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে পচে দুর্গন্ধ তৈরী হয়। তাই যাদের দাঁতে ফাঁকা আছে তাদের ডেন্টাল ফ্লাস অথবা ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশে ব্যবহার করতে হবে। এক জনের ব্যবহৃত ব্রাশ অন্যারা ব্যবহার করবেন না। হাতের আঙ্গুল বা ব্রাশ দিয়ে জিব পরিষ্কার করতে হবে। মারিতে ম্যাসাজ করতে হবে এতে মাড়িতে রক্ত চলাচল বাড়ে। সুতা দিয়ে অথবা চিকন টুথপিক দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। ফ্লোরাইড বেজ মাউথওয়াশ দিয়ে নিয়মিত কুলি করা। ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনি রোগ, ক্যানসারের মতো ক্রনিক রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাউথওয়াশ ব্যবহার করা। টানা অধিক সময় মাউথওয়াশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী। জিহ্বা ও মুখের উপরের তালু ব্রাশ করুন।

খাদ্যাভ্যাস-

ঋতু অনুযায়ী শাকসবজি খেতে হবে। এসিডিক এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে। এসিডিক এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে দাঁত ক্ষয় হয়। বেশি পরিমানে পানি পান করুন । পানি পানে মুখের আদ্রতা বাড়ে। মুখের আদ্রতা বাড়লে দাঁতের ক্ষয় কম হয়। দুধ, দই, আখরোট, সামুদ্রিক মাছ, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, পনির, সয়াবিন, কাঁচা বাদাম, কালো ও সবুজ কচুশাক, শজনেপাতা, পুদিনাপাতা, সরিষাশাক, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, চিংড়ি শুঁটকি, ডুমুর ইত্যাদি হলো উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত এই খাবারগুলো বেশি পারিমানে খান। আর ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার দাঁত ও হাড় মজবুত করে। বেশি টক যুক্ত খাবার কম খান। জাইলোকল যুক্ত চুইংগাম খান এতে দাঁত ও মুখের মাসেলের ব্যায়াম হবে। লেবু, কমলা, মালটা, আঙুর, পেঁপে, আনারস, জাম , সবুজ শাক সবজি, কাঁচা মরিচ, পুদিনা পাতা ইত্যাদি প্রচুর ভিটামিন সি যুক্ত এই খাবারগুলো খান। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার মাড়ির রক্তপাত কমায়।

মাছ, কলিজা, বীজ, বাদাম, ডিম, মুরগীর গোস্ত, দুধ ও ওটস ভিটামিন বি যুক্ত এই খাবারগুলো খান। ভিটামিন বি যুক্ত খাবার দাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আশযুক্ত ও শক্ত খাবার দাঁত ও মাড়িকে সুস্থ্য রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বেশি বেশি আশযুক্ত ও শাক্ত খাবার গ্রহন করুন। আশঁযুক্ত ও শক্ত খাবার হল: গাজর, পেয়ারা, ডেঢ়স, আনারস, আখ, আমরা, নাশপাতি, আপেল, নাড়িকেল ও কাঁচা পেপে। ধুমপান, মদ, তামাক, পান, সুপারি, জর্দা হতে নিজেকে বিরত রাখুন। এইগুলোতে দাঁতের স্বাস্থ্য নষ্ঠ হয়। ফাষ্ট ফুড, আলুর চিপস্, কোমল পানীয়, কৃত্রিম জুস, চকলেট ও আইসক্রিম কম পরিমানে খান। এই খাবারগুলো বেশি পারিমানে খেলে দাঁতে গর্ত সৃষ্টি হয়। বিস্কুট, লজেন্স ও কেক খেলে দাঁত ব্রাশ করুন।

দাঁতের যত্ন নিতে চিকিৎসকের পরামর্শ-

এক এক জনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেক রকম। তাই দাঁতে সমস্যা দেখা দেখ বা না দেখ বছরে কমপক্ষে দুইবার অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

উপসংহার-

মানব দেহের বিভিন্ন অংশের মধ্যে দাঁত হলো মহান আল্লহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে অনেক বড় একটি নি’আমত। আমরা এই নি’আমতের ক্বদর করি না। সুস্থ্য থাকতে আমরা দাঁতের যত্ন করি না। দাঁতকে সুন্দর ও সুস্থ্য রাখতে হলে অবশ্যই সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন নিতে হবে। কেননা সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন না করলে দাঁত ব্যাথা সহ দাঁতে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হবে। তাই আসুন আমরা সকলেই সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন নেই।

দাঁতের যত্ন নিতে বিস্তারিত জানুন

3 thoughts on “দাঁতের যত্ন নিন সুস্থ্য থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *