ভূমিকা-
ব্রণ দূর করার উপায়- মানবদেহে বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগ হয়ে থাকে। এ সকল চর্মরোগ একদিকে যেমন যন্ত্রণাদায়ক অপরদিকে শারিরীক সৌন্দর্য্য নষ্ট করে ফেলে। বিশেষ করে চেহারার সৌন্দর্য্য নষ্ট করে, এমন কিছু চর্মরোগ রয়েছে। ব্রণ তেমনই একটি চর্মরোগ। এই চর্মরোগটি অনেকেরই হয়ে থাকে। ব্রণ হওয়ার ফলে মুখে ছোট ছোট কালো দাগ পড়ে যায়, যা খুবই বিশ্রী দেখায়। এ রোগটি সাধারণত কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদের বেশী হয়ে থাকে। মুখে ব্রণ হওয়ার কারণে এ বয়সের ছেলে-মেয়েদেরকে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। ব্রণ দূর করার জন্য আমরা কতই না প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। তবুও এ সমস্যার সমাধান সহজে হয় না। আজকে আমরা জেনে নিব আমাদের মুখে ব্রণ কেন হয় এবং ব্রণ দূর করার উপায় কি?
বিষয়: ব্রণ দূর করার উপায়
ব্রণ নিয়ে কিছু প্রশ্ন-
প্রশ্ন- ব্রণ কোন ধরনের রোগ?
উত্তর- ব্রণ এক ধরণের চর্মরোগ।
প্রশ্ন- ব্রণ কোন বয়সে বেশী হয়?
উত্তর- বয়ঃসন্ধিকালে ব্রণ বেশী হয়।
প্রশ্ন- ব্রণ হলে ত্বকের কোন ক্ষতি হয়?
উত্তর- ব্রণ হলে ত্বকের তেমন ক্ষতি হয় না। তবে ব্রণের পরিমান বেড়ে গেলে এবং ব্রণ ফাটালে ত্বকে কালো কালো দাগ পড়ে এবং ত্বক খসখসে হয়ে যায়।
ব্রণ দূর করার উপায়
মুখে ব্রণ কেন হয়-
১. মুখের ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার না করলে।
২. পর্যাপ্ত পরিমানে না ঘুমানো।
৩. পানি কম পান করা।
৪. ফাস্টফুড ও তেল জাতীয় খাবার গ্রহণ।
৫. জীবাণু ও ময়লাযুক্ত গামছা বা তোয়ালে ব্যবহার।
৬. অন্যের গামছা বা তোয়ালে ব্যবহার।
৭. সেলুনে সেভ করা।
৮. অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহার করলে।
৮. হরমোনের সমস্যার কারণে।
৯. ত্বকে তৈলাক্তভাব বৃদ্ধির কারণে
১০. বংশগত কারণ।
ব্রণ দূর করার উপায় কি তা জেনে নিন-
ব্রণের কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া চেহারার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে আমরা কত ভাবেই না চেষ্টা করে থাকি! বিভিন্ন ধরণের প্রসাধনী ব্যবহার করি। কিন্তু খুব সহজে এ সমস্যার সমাধান হয় না। ব্রণের সমস্যা থেকে বাঁচতে প্রথমত জানতে হবে কি কি কারণে ব্রণ হয় এবং দ্বিতীয়ত ব্রণ দূর করার উপায় কি? এ দু’টি বিষয় সম্পর্কে ভালভাবে জানলে খুব সহজেই ব্রণের সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। প্রাকৃতিকভাবে ব্রণ দূর করার উপায় নিচে দেওয়া হলো-
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা-
আমাদের ত্বকে লোমকুপে সিবেসিয়াস গ্রন্থি নামে এক ধরনের অতি ছোট এক্সক্রনিক গ্রন্থি রয়েছে। এই গ্রন্থি হতে সিবাম নামক এক ধরনের তৈলাক্ত প্রদার্থ নিঃসৃত হয়। যা ঘামের সাথে মিশে আমাদের শরীরের আদ্রতা বাড়িয়ে দেয়। ময়লা জমে জমে লোমকুপ বন্ধ হয়ে গেলে সিবাম ত্বকের উপরে আসতে পারে না এবং বন্ধ হওয়া লোমকুপে আস্তে আস্তে জমতে থাকে। লোমকুপে সিবাম জমা হওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয় এবং সেখানে ইনফেকশন হয়ে ব্রণ এর সৃষ্টি হয়। মানুষের শরীরের টেস্টোটেরান নামক এক ধরনের হরমোন রয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালে এই হরমোন এর পরিমান বেড়ে যায়, যার প্রভাবে সিবেসিয়াস গ্রন্থি হতে অতিরিক্ত পরিমানে সিবাম নিঃসৃত হয়ে ব্রণের সৃষ্টি হয়। এজন্য মুখের ত্বক সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে।
অতিরিক্ত মেকআপ পরিহার করা-
চেহারার সৌন্দর্য্য কৃত্রিমভবে বৃদ্ধি করার জন্য অনেকেই মেকআপ ব্যবহার করে থাকে। অতিরিক্ত মেকআপ করার ফলে ত্বকের লোমকুপ বন্ধ হয়ে যায় এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া লোমকুপে সিবাম নামক তৈলাক্ত পদার্থ জমা হয়ে ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাঁধে এবং ইনফেকশন তৈরী করে। যার ফলে ব্রণ এর সৃষ্টি হয়। তাই অতিরিক্ত মেকআপ পরিহার করতে হবে। মেকআপ করলেও কিছু সময় পর ভালভাবে মুখ পরিস্কার করতে হবে। এছাড়াও মুখে ব্যবহৃত মেকআপ ব্রাশ ও স্পঞ্জ ব্যবহারের পর ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। না হলে মেকআপ ব্রাশ ও স্পঞ্জ এ লেগে থাকা ময়লা, তেল ও মৃত কোষ পরবর্তীতে ব্যবহারের সময় মুখে জমা হয়ে ব্রণ এর সৃষ্টি হবে।
ব্রণ দূর করার উপায়
ব্রণ দূর করার উপায় এর গুরুত্বপূর্ণ একটি টিপস পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো-
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ্য মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘুমানো প্রয়োজন। এর চেয়ে কম ঘুমানোর ফলে শরীরে কর্টিসল হরমোন এর উৎপাদন বেড়ে যায়। কর্টিসল হরমোন এর প্রভাবে সিবাম বেশি পরিমানে নিঃসৃত হয়ে ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায় এবং পোরস ক্লাগড হয়ে ব্রণ এর সৃষ্টি হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমাতে হবে।
ব্যবহৃত তোয়ালে বা গামছা নিয়মিত পরিষ্কার করা-
আমাদের ব্যবহৃত তোয়ালে বা গামছায় জন্ম নেওয়া ব্যাকটেরিয়া আমাদের ত্বকে ইনফেকশন তৈরী করে ব্রণ এর সৃষ্টি করে। তাই ব্যবহৃত তোয়ালে বা গামছা নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
কিছুদিন পরপরই বালিশের কভার পরিষ্কার করা-
দীর্ঘদিনের অপরিষ্কার বালিশের কভারে লেগে থাকা ময়লা থেকে জন্ম নেওয়া ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে ব্রণ হতে পারে। তাই কিছুদিন পরপরই বালিশের কভার ভালভাবে পরিস্কার ও জীবাণুমুক্ত করা উচিত।
টপিক: ব্রণ দূর করার উপায়
পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা-
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করার ফলে অপ্রয়োজনীয় পানি ঘাম আকারে বেরিয়ে যায়। যা লোমকুপ পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে। লোমকুপ পরিষ্কার থাকলে সিবাম সহজেই নিঃসৃত হতে পারে। ফলে ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদন কমে যায় এবং আস্তে আস্তে ব্রণ দূর হয়ে যায়।
সেলুনে সেভ করা বর্জন করতে হবে-
সেলুন একই কুর, ফোম ও ব্রাশ দিয়ে অনেকেই সেভ করা হয়ে থাকে। যার ফলে অন্যের শরীরের জন্ম নেওয়া ব্যাক্টেরিয়াগুলো আপনার শরিরে এসে ইনেফেকশন তৈরী করে ব্রণ এর সৃস্টি করে। তাই সেলুনে সেভ করা বাদ দিতে হবে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন-
ফাষ্টফুড, রিফাইন করা খাবার, তৈলাক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। এসব খাবার খাওয়ার ফলে পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। যার ফলে ব্রণ এর সৃষ্টি হয়। মৌসুমী সবুজ শাক সবজি খেতে হবে।
ব্রণ দূর করার উপায়
টুথপেস্ট-
যে সকল টুথপেস্টে জেল নেই সেই সকল টুথপেস্ট ব্রণে ব্যবহার করলে ব্রণের ফুলা ভাব কবে যাবে। অনেক সময় টুথপেস্ট ব্যবহার করলে একদিনের মধ্যেই ব্রণ শুকিয়ে যায়। রাতে ঘুমানোর পূর্বে ব্রণ এর উপর টুথপেস্টের প্রলেপ লাগিয়ে ঘুমিয়ে গেলে সকলে উঠে দেখবেন ব্রণ কানিকটা শুকিয়ে গেছে।
নিম-তুলসির পেস্ট-
ব্রণ দূর করতে নিম ও তুলসি পাতার পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। নিমের এ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট এবং তুলসির অ্যান্টিব্যাকোটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ত্বককে রাখে জীবানু মুক্ত।
সাবজেক্ট: ব্রণ দূর করার উপায়
মধু-দারুচিনি-
মধুতে যাদের এলার্জি নাই তারা দারুচিনির গুঁড়ার সাথে দ্বিগুন পরিমানে মধু মিশিয়ে পেস্ট তেরী করুন। ঘুমানোর পূর্বে তা ব্রণের উপলে লাগিয়ে দিন। সকালে ভালকরে ধুয়ে নিন। এতে ব্রণ কমে যাবে।
ডিমের সাদা অংশ-
ডিমের সাদা অংশ ব্রণ সাড়াতে কাজে লাগে। ডিমের সাদা অংশ ব্রণের উপর লাগিয়ে ঘুমিয়ে যান। পরদিন সকালে উঠে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিন।
এ্যালোভেরা-
যুগযুগ ধরে বিভিন্ন চর্মরোগের প্রতিষেধক হিসাবে মানুষ অ্যালোভেরা ব্যবহার করে আসছে। অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য যা ব্রণ তৈরী কারী জীবানু ধ্বংশ করে। এছাড়াও অ্যালোভেরা ত্বকের কোমলতা বৃদ্ধি করে। অ্যালেভেরা, নিমপাতা ও তুলসী পাতার পেস্ট তৈরী করে ঘুমানোর পূর্বে ব্রনের উপর লাগিয়ে শুকাতে দিন। পরদিন ভালাভাবে ধুয়ে পেলুন।
ওটস-
ওটস তৈল শোষণ করে ত্বকের তেলাভাব দূর করে। এছাড়াও ব্রণ অথবা ফুসকুড়ির নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মধুর সাথে ওটস মিশিয়ে ব্রণ বা ফুসকুড়িতে উপর ব্যবহার করুন।
ব্রণ দূর করার উপায়
সরিষা-
সরিষাতে রয়েছে স্যালিসিলিকি এসিড যা ব্রণের জীবাণুকে ধ্বংস করে। সরিষার গুঁড়ার সাথে পরিমানমত মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর মুখে ব্যবহার করুন। কিছু সময় পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে মুখের কালো দাগ সহ ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
লেবুর রস-
লেবুর রয়েছে এসিড যা ব্রণ এর জীবাণু ধ্বংশ করে। তাই ব্রণ দূর করতে যেখানে ব্রণ আছে, সে সব স্থানে লেবুর রস দিন। তারপর ডিমের সাদা অংশ লাগিয়ে দিন। ১৫-২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের সাথে সাথে মুখের কালদাগও দূর হয়ে যাবে।
গ্রিন টি-
ব্রণ সাড়াতে গ্রিন টি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গ্রিন টি পানিতে মিশিয়ে গরম করে নিন । তারপর মিশ্রনটি ভালোভাবে ঠান্ডা করে ব্রণের উপর ব্যবহার করুন। কিছু সময় পর ধুয়ে নিন।
সাবজেক্ট: ব্রণ দূর করার উপায়
অ্যাসপিরিন-
অ্যাসপিরিন এ রয়েছে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যা ব্রণ শুকিয়ে দেয়। কয়েকটি ট্যাবলেট ভালোভাবে গুঁড়া করে নিন। পরিমান মত পানিতে মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করুন। ব্রণে আক্রান্ত হওয়া স্থানে লাগিয়ে দিন। কিছু সময় অপেক্ষা করে ধুয়ে নিন।
রসুন-
ব্রণ দূর করতে রসুন কার্যকরী ভূমিকা রাখে। রসুন এর ব্যবহারও সহজ। কয়েক কোয়া রসুন নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন। তারপর কোয়াগুলো তেতলিয়ে নিন। তেতলানোর ফলে যে রস বের হবে ব্রণের উপর লাগান। পাঁচ ছয় মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
তেল বিহীন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার-
মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর আলতোভাবে তেল বিহীন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
সৌন্দর্য্য ও ফিটনেস সম্পর্কে আরও জানুন